Admin

আইবাস++ কি ? আইবাস সিস্টেমের মাধ্যমে পেনশন প্রক্রিয়াকরণ ও প্রদান করার উপায় ?

আইবাস++ কি :

আইবাস++ এর পরিচিতি

সমন্বিত বাজেট ও হিসাবরক্ষণ পদ্ধতি বা ‘আইবাস++’ (Integrated Budget and Accounting System- iBAS++) হচ্ছে বাংলাদেশ সরকারের একটি সমন্বিত আর্থিক ব্যবস্থাপনা তথ্য পদ্ধতি। এটি মূলতঃ একটি ইন্টারনেটভিত্তিক সফট্ওয়্যার, যার মাধ্যমে সরকারের বাজেট প্রণয়ন, বাজেট বাস্তবায়ন অর্থাৎ বরাদ্দ বিভাজন, অর্থ অবমুক্তি, ৰাজেট পুনঃউযোজন, অনলাইনে বিল দাখিল এবং তার বিপরীতে চেক বা ইএফটির মাধ্যমে অর্থ প্রদান, রাজস্ব জমার হিসাবরক্ষণ, স্বয়ংক্রিয় ব্যাংক হিসাব সমন্বয় (Reconciliation) ইত্যাদি আর্থিক কর্মকান্ড একটি একক সার্ভারের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। ।

আইবাস++ এ মোট চারটি মডিউল রয়েছে। এগুলো হচ্ছে-

ক. বাজেট প্রণয়ন

খ. জেনারেল লেজার

গ. ৰাজেট বাস্তবায়ন

ঘ. হিসাবরক্ষণ

ক. বাজেট প্রণয়নঃ

গুগল নিউজ হতে আপডেট নিউজ সংগ্রহ করে নিতে পারেন।

আইবাস++ এর মাধ্যমে দুটি প্রক্রিয়ায় বাজেট প্রণয়ন করা হয় – মাঠ পর্যায়ের দপ্তরগুলো থেকে এন্ট্রি করার মাধ্যমে বিভিন্ন অধিদপ্তর পরবর্তী বছরে তাদের পৌনঃপুনিক বাজেটের প্রয়োজন নির্ধারণ করার পর তা মন্ত্রণালয়ের কৌশলগত উদ্দেশ্য ও অগ্রাধিকার খাত বিবেচনার ভিত্তিতে নির্ধারিত সম্ভাব্য ব্যয়সীমার সাথে সম্মিলন ঘটিয়ে বাজেট প্রাক্কলন ও প্রক্ষেপণ প্রস্তুত করা যায়। এ মডিউল ব্যবহার করে মাঠ পর্যায়ের দপ্তর, অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয় ধাপে ধাপে বাজেট প্রণয়ন করে অনলাইনে অর্থ বিভাগে দাখিল করতে পারে, যা অর্থ বিভাগ প্রয়োজনীয় পরিমার্জন শেষে মহান সংসদে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করে থাকে। আইবাস ++ থেকেই এ সংক্রান্ত যাবতীয় দলিল, প্রতিবেদন ও বিশ্লেষণ তৈরী করা হয়ে থাকে ।

খ. জেনারেল লেজারঃ

জেনারেল লেজার মডিউলটি হচ্ছে আইবাস++ এর কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ বিন্দু- যা পর্দার অন্তরালে থেকে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনার গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করে। বাজেট অনুমোদনের পর তা এ মডিউলের ‘বাজেট উপযোজন’ সাব-মডিউলের মাধ্যমে লোড করা হয়। এরপর আইবাস++ এ যত লেনদেন ঘটে থাকে, তা সে বরাদ্দ বিভাজন হোক বা অর্থ ব্যয় হোক, সবকিছুই জেনারেল লেজারে অন্তর্ভূক্ত হয় এবং সংশ্লিষ্ট শ্রেণীবিন্যাস কোডের বিপরীতে স্থিতি হালনাগাদ করা হয়। এ মডিউলের মাধ্যমে প্রতিটি হিসাব কোডের বিপরীতে সরকারের আয়-ব্যয়ের সর্বশেষ হিসাব যেমন তাৎক্ষনিকভাবে পাওয়া যাবে, তেমনি সরকারের আর্থিক সম্পদ ও দায় এবং সংশ্লিষ্ট অর্থ প্রবাহের একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়া যাবে।

গ. বাজেট বাস্তবায়নঃ

বাজেট বাস্তবায়ন মডিউলের মাধ্যমে মহান সংসদ কর্তৃক অনুমোদিত বাজেট প্রথমে জেনারেল লেজারে লোড করা হয়, যার ফলে বরাদ্দ বিভাজন, অর্থ অবমুক্তি, ক্রয়াদেশ প্রদান এবং ব্যয়ের ক্ষেত্রে অনুমোদিত বাজেটের নিয়ন্ত্রণ রক্ষা করা যায়। বাজেট বাস্তবায়ন মডিউলের মাধ্যমে নিম্নোক্ত কার্যক্রমসমূহ সম্পাদন করা যায়ঃ

বরাদ্দ বিভাজন:

বাংলাদেশ সরকারের বাজেট প্রণীত হয় জাতীয় পর্যায়ে, অর্থাৎ কোন একটি দপ্তরের সারা দেশব্যাপী বিস্তৃত সকল অফিসের মোট প্রাপ্তি ও ব্যয়ের বাজেট একত্রে প্রণয়ন করা হয়। যেমন, বাজেটে বলা থাকে দেশের সকল উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের একত্রে মোট ভ্রমণ ভাতার জন্য বরাদ্দ কত। কিন্তু এই অর্থ ব্যয়ের পূর্বে অবশ্যই প্রতিটি উপজেলা কৃষি কার্যালয়ে ভ্রমণভাতা বাবদ পৃথক পৃথকভাবে বরাদ্দ নির্ধারণ করতে হয়। এই প্রক্রিয়াটিই বরাদ্দ বিভাজন নামে পরিচিত, যা আইবাস++ এর বরাদ্দ বিভাজন সাব- মডিউলের মাধ্যমে সুষ্ঠুভাবে করা যায়। বাজেটের অতিরিক্ত বরাদ্দ দেওয়া বা বরাদ্দের অতিরিক্ত ব্যয় এই সফট্ওয়্যারটির মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। তাছাড়া বাজেট বরাদ্দ ও ব্যয়ের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় বিশ্লেষণও এ সফট্ওয়্যারটির মাধ্যমে করা যায়।

অর্থ অবমুক্তি:

নগদ ব্যবস্থাপনা (Cash Management) এর অংশ হিসেবে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প ও কর্মসূচীর ক্ষেত্রে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে অর্থ অবমুক্ত করার পর ব্যয় করা হয়। আইবাস++ এ এই কাজটি সুষ্ঠুভাবে করার ব্যবস্থা রয়েছে, যার ফলে একদিকে যেমন বাজেটের অতিরিক্ত অবমুক্তি এবং অবমুক্তির অতিরিক্ত ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তেমনি এ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিশ্লেষণ তৈরী করা যায়, যা নগদ ব্যবস্থাপনায় মূল্যবান ভূমিকা পালন করে। এর পাশাপাশি বর্তমানে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আইবাস++ এর মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অর্থ অবমুক্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

আরও জানুনঃ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছুটির তালিকা ২০২৩

পুনঃউপযোজন:

প্রয়োজনের নিরিখে অধিক অর্থের প্রয়োজনে এক বা একাধিক অর্থনৈতিক কোড হতে অন্য এক বা একাধিক অর্থনৈতিক কোডে অর্থ স্থানান্তরের প্রয়োজন হলে তা পুনঃউপোজনের মাধ্যমে করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় বা অর্থ বিভাগ কর্তৃক বিধি-বিধানের আলোকে যৌক্তিকভাবে পুনঃউপযোজন করা হয়ে থাকে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অধিদপ্তর পর্যায়ে পুনঃউপযোজনের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, যা বাজেট বাস্তবায়ন মডিউলের মাধ্যমে সম্পন্ন করা যাবে।

ঘ. হিসাবরক্ষণঃ

এই মডিউলের মাধ্যমে ডিডিওগণ কর্তৃক অনলাইনে ক্রয়াদেশ ও বিল দাখিল থেকে শুরু করে বিল নিরীক্ষণ এবং অনুমোদনের প্রতিটি ধাপ, গ্রহীতাকে চেক বা ইএফটি প্রদান, ব্যাংকে ইলেকট্রোনিক অ্যাডভাইস প্রেরণ, ব্যাংক থেকে প্রেরিত ইলেকট্রোনিক ডেবিট ও ক্রেডিট স্ক্রল সিস্টেমে আপলোডের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্যাংক হিসাব সমন্বয় ইত্যাদি কর্মকান্ড সম্পন্ন হবে।

জেনারেল লেজার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত থাকার ফলে এই মডিউল প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বাজেট যাচাই করবে এবং বরাদ্দের অতিরিক্ত খরচ রোধ করবে।

আইবাস++ এ থাকবে কর্মচারিদের ডাটাবেজ, যার ভিত্তিতে বেতন বিল স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রস্তুত হবে এবং কর্মকর্তা ও ডিডিওগণ তা অনলাইনে দাখিল করতে পারবেন। ভ্রমণ ভাতা বিলসহ অন্যান্য বিলও অনলাইনে দাখিল করা যাবে। স্ব স্ব বিল অনুমোদন এবং চেক বা ইএফটি প্রদানের প্রতিটি পর্যায় ডিডিওগণ অনলাইনে দেখতে পারবেন। এ ছাড়া পেনশনভোগীদের জন্য একটি পৃথক ডাটাবেজ সিস্টেমে প্রস্তুত করা হয়েছে। ফলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইএফটির মাধ্যমে পেনশন প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে। আইবাস++ এ সরবরাহকারীদের ডাটাবেজ সংরক্ষণ করা হবে, যার ভিত্তিতে তাদেরকেও ইএফটির আওতায় আনা সম্ভব হবে।

আরও জানুনঃ নৈমিত্তিক ছুটি কি বা সি এল ছুটি কি ? নৈমিত্তিক ছুটির নিয়ম ? নৈমিত্তিক ছুটি বা সিএল ছুটি সর্বোচ্চ কত দিন নেওয়া যায় ? কোন কোন ক্ষেত্রে নৈমিত্তিক ছুটি মঞ্জুর করা যায় না ?

আইবাস++ সিস্টেমটি শুধু যে বর্তমান এবং প্রস্তাবিত নতুন শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতির উপযোগী তাই নয়, বরং পরবর্তীতে শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতিতে কোন পরিবর্তন হলে তার সাথেও খাপ খাওয়াতে পারবে। তাছাড়া সিস্টেমটি Self Accounting Entity- SAE তেও চালানোর উপযোগী।

আইবাস++ সিস্টেমের মাধ্যমে পেনশন প্রক্রিয়াকরণ ও প্রদানঃ

পেনশন প্রক্রিয়াকরণ ও প্রদান প্রক্রিয়াটি মূলত: কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন করা হয়। প্রথম ধাপে পেনশনারের তথ্য ডাটা বেইজে এন্ট্রি করা হয় -যা Master Data তে সংরক্ষিত থাকে। দ্বিতীয় ধাপে Pension Processing মেনুতে চারটি প্রক্রিয়ায় পেনশন প্রক্রিয়াকরণ করা হয়। প্রথমে বিল ও টোকেন এন্ট্রি দেওয়া হয়, এরপর বিল অনুমোদন দেওয়া হয় এবং সবশেষে ইএফটি অর্ডার এন্ট্রি দেওয়া হয়। তৃতীয় ধাপে EFT Transmission মেনুর মাধ্যমে আইবাস সিস্টেম থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক বরাবরে সংশ্লিষ্ট পেনশনারের ব্যাংক হিসাবে পেনশন প্রেরণের নিমিত্ত ইএফটি নির্দেশনা প্রেরণ করা হয়। আইবাস সিস্টেমের মাধ্যমে পেনশন প্রদানের কাজটি মূলতঃ এখানেই সমাপ্ত হয়। এরপর Send EFT SMS মেনুর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট পেনশনারকে তাঁর পেনশন প্রেরণের ব্যাপারে SMS এর মাধ্যমে অবহিত করা হয়। এ SMS স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিস্টেম থেকে জেনারেট হয়ে থাকে।

রিলেটেড ট্যাগঃ আইবাস++ কি, আইবাস ++ লগইন, আইবাস++ ফরম,আইবাস সিস্টেমের মাধ্যমে পেনশন

admin

Recent Posts

এমপিওভুক্ত স্কুল শিক্ষকদের বেতন ও ভাতাদি কত ২০২৪ ?

সারা দেশে অসংখ্য বেসরকারি এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক স্কুল রয়েছে। এসব বেসরকারি এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক,…

2 days ago

সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষকদের বেতন গ্রেড এবং বেতন কত ২০২৪ ?

বাংলাদেশে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা কত ? বাংলাদেশে শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী…

2 weeks ago

ঈদুল ফিতর এর কতদিন থাকছে ২০২৪ সালে সরকারি ছুটি ?

পোস্ট সামারীঃ কতদিন থাকছে  ঈদুল ফিতর ২০২৪ সালে সরকারি ছুটি ? ঈদুল ফিতর ২০২৪ সরকারি…

3 weeks ago

ছুটি নগদায়ন নীতিমালা ২০২৪ ?

ছুটি নগদায়নের ইংরেজি কি ? ছুটি নগদায়নের ইংরেজি কি হলো লাম্পগ্রান্ড (lump grant) . ছুটি…

1 month ago

অর্জিত ছুটি কাকে বলে ? অর্জিত ছুটি কত প্রকার ও কি কি ? গড় বেতনে অর্জিত ছুটির হিসাব ২০২৪ ?

অর্জিত ছুটি কাকে বলে ? অর্জিত ছুটি কত প্রকার ও কি কি ? অর্জিত ছুটি…

2 months ago