দেশের ভূমি ব্যবস্থাপনায় ডিজিটাল প্রযুক্তি ? ই-নামজারি কি ? ভূমি মালিকদের আধুনিক কার্ড ?
পোস্ট সামারীঃ
- ভূমি ব্যবস্থাপনার ইতিহাস ?
- দেশের ভূমি ব্যবস্থাপনায় ডিজিটাল প্রযুক্তি ?
- ভূমি ব্যবস্থাপনা অটোমেশন প্রকল্প ?
- ই-নামজারি চালু ?
- ডিজিটাল রেকর্ড রুম থেকে জমির খতিয়ান সংগ্রহ ?
- অনলাইনে খাজনা
- চালু হবে ভূমি ডেটা ব্যাংক
- ভূমিমালিকদের আধুনিক কার্ড
- ২৪ ঘণ্টা ভূমিসেবা
- অনলাইনে তথ্য জমির তথ্য যাচাই
ভূমি ব্যবস্থাপনার ইতিহাস ?
বাংলাদেশের ভূমি ব্যবস্থাপনার ইতিহাস সুপ্রাচীন হলেও ব্রিটিশ আমলে এর বিজ্ঞানভিত্তিক জরিপ কার্য পরিচালিত হয়ে ভূমি মালিকগণের স্বত্ব স্থিরকৃত হয় এবং মৌজাভিত্তিক নক্সা ও খতিয়ান প্রস্তুত হয়। এসব কার্যক্রম সহকারী কমিশনার (ভূমি) গণের পূর্বসূরী রাজস্ব অফিসারের তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন করা হয়। ১৮৮৫ সালের বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইনের ৩ (১৪) ধারায় রাজস্ব অফিসারের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে “Revenue officer in any Provision of this Act includes any officer whom the Provincial Government may appoint, by name or by virtue of his office, to discharge any of the functions of a Revenue officer under that provision.”
ইংরেজ শাসনামলে ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থাপনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল “Bengal Board of Revenue”, জেলার কালেক্টর এবং প্রাদেশিক সরকার কর্তৃক নিয়োগকৃত রাজস্ব অফিসারবৃন্দ। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর, পূর্ব বাঙলা বর্তমান বাংলাদেশে, ১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন বলে জমিদারি প্রথার বিলোপ সাধিত হয়; প্রজা সাধারণ ভূমি মালিকের মর্যাদা লাভ করে। এ আইনে যুগান্তকারী ভূমি সংস্কার সাধিত হয় ।
ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে জেলায় ডি.এম-কে কালেক্টর ও মহকুমায় এসডিএম-কে সাব ভিভিশনাল ম্যানেজার এর দায়িত্ব প্রদান করা হয়। ১৯৫৯ সালে রাজস্ব কমিশনের প্রদত্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে রাজস্ব প্রশাসনের সুবিধার্থে এক বা একাধিক থানা নিয়ে একটি রাজস্ব সার্কেল গঠিত হয়। প্রতিটি রাজস্ব সার্কেলে সার্কেল অফিসার (রাজস্ব) নিয়োগ দেয়া হয়। সার্কেল এর অধীনে জমিদারের ব্যবহৃত কাঁচারি বাড়িতে এক বা একাধিক ইউনিয়নের জন্য একটি তহশীল অফিস স্থাপিত হয়। তহশীলের অধীনস্থ মৌজার জমাজমির রেকর্ড সংরক্ষণ ও খাজনা আদায়ের সুবিধার্থে একজন তহশীলদার ও ২জন সহকারী তহশীলদার নিয়োগ দেয়া হয়। ১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের ২ (২৪) ধারায় রাজস্ব কর্মকর্তার সংজ্ঞায় বলা হয়েছে “Revenue Officer includes any officer whom the Government may appoint to discharge all or any of the functions of a revenue officer under this Act or any rules made their under”.
রাজস্ব কর্মকর্তাগণ ১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের ১১৬, ১১৭ ও ১১৯ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে জোত-জমার সংযুক্তিকরণ, বিযুক্তিকরণ ও একত্রীকরণের ক্ষমতা লাভ করেন। উত্তরাধিকার, হস্তান্তর, দান, অধিগ্রহণ বা অন্য কোন সূত্রে সম্পত্তি অর্জন বা বর্জন করলে কালেক্টর বা রাজস্ব অফিসারকে এ আইনের ১৪৩ ধারা মোতাবেক রেকর্ড হালনাগাদকরণের বা সংশোধনের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। এ প্রক্রিয়াকে নামজারি বা Meutation বলা হয়। এ আইনে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রাজস্ব অফিসার জমিদার বা এস্টেটের ক্ষতিপূরণ তালিকা প্রণয়ন, খাজনা আদায়ের অধিকার অধিগ্রহণ, পরিবারভিত্তিক কৃষি জমির সর্বোচ্চ সিলিং (পাকিস্তান আমলে ৩৭৫ বিঘা, বাংলাদেশে ৮৪ সাল পর্যন্ত ১০০ বিঘা এবং তৎপরবর্তীতে ৬০ বিঘা কৃষি জমি) বহির্ভূত জমি উদ্ধার, ভূমিহীনদের মধ্যে বন্টন, ২৫ বিঘার ঊর্ধ্বের ভূমি মালিকগণের তালিকা প্রণয়ন, সিকস্তি, পয়স্তি জমির ব্যবস্থাপনা, সায়রাত মহাল ব্যবস্থাপনা, ভূমি উন্নয়ন কর নির্ধারণ ও আদায়, খাস জমি ব্যবস্থাপনাসহ সরকারি সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
১৯৫৫ সালের প্রজাস্বত্ব বিধিমালায় রাজস্ব অফিসার কর্তৃক ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার বিধিবিধান বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত ভূমি রাজস্ব বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীনে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক বা কালেক্টর, মহকুমা প্রশাসক, সার্কেল অফিসার (রেভিনিউ), কানুনগো, তহশীলদার ও সহকারী তহশীলদার কর্তৃক ভূমি প্রশাসন ও ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থাপনা পরিচালিত হয়। ১৯৭৩ সালে ভূমি রাজস্ব বোর্ড-এর স্থলে ভূমি প্রশাসন ও ভূমি সংস্কার মন্ত্রণালয় গঠিত হয়। তখন ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থাপনার ভার মন্ত্রণালয়ের উপর অর্পিত হয়। মন্ত্রণালয় এর পক্ষে মাঠ প্রশাসন পরিচালনা ও আপিল মামলা নিষ্পত্তি করা কঠিন হয়ে দাঁড়ালে ১৯৮১ সালে ভূমি প্রশাসন বোর্ড গঠন করে বোর্ডকে মাঠ প্রশাসনসহ আপিল মামলা নিষ্পত্তির দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। সার্কেলের জন্য নিয়োজিত সার্কেল অফিসার (রাজস্ব) / রাজস্ব কর্মকর্তাগণ ২য় শ্রেণির কর্মকর্তা ছিলেন।
১৯৮২ সালে সরকার প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ ও ক্ষমতায়নের উদ্দেশ্যে প্রশাসনিক পুনর্গঠন বাস্তবায়ন সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি (NICAR) গঠন করেন। এ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ভূমি প্রশাসন এবং ভূমি সংস্কার মন্ত্রণালয় ২৪-১২-১৯৮৪ তারিখে IC-15/84/1689 Esstt. নং স্মারকে পুনর্গঠিত ভূমি রাজস্ব প্রশাসনের জনবল কাঠামোর আদেশ জারি করে। এই আদেশের (I) নং ক্রমিকে সারাদেশে প্রতিটি ইউনিয়নে পর্যায়ক্রমে ৩ (তিন) বছরের মধ্যে একটি করে তহশীল অফিস স্থাপনসহ একজন তহশীলদার (বর্তমানে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা), একজন সহকারী তহশীলদার (ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা) ও দুইজন এম.এল.এস.এস (বর্তমানে অফিস সহায়ক) নিয়োগদানের ব্যবস্থা রাখা হয়। ফলে সারাদেশে এ পর্যন্ত ৩৪৫৮ টি ইউনিয়ন তহশীল অফিস বর্তমান ইউনিয়ন ভূমি অফিস স্থাপিত হয়েছে। এ আদেশের (II) নং ক্রমিকে উপজেলা পর্যায়ে একজন প্রথম শ্রেণির উপজেলা রাজস্ব অফিসারকে প্রধান করে ১৩ (তের) জন কর্মকর্তা/কর্মচারীর সমন্বয়ে উপজেলা রাজস্ব অফিস পুনর্গঠন করা হয় এবং একজন সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসারসহ ১৯ জন কর্মকর্তা/কর্মচারীর সমন্বয়ে স্থায়ীভাবে ভূমি জরিপ অফিস স্থাপন করা হয়। ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থাপনা এবং জরিপ বিভাগের কার্যক্রমের নিয়ন্ত্রণভার প্রথম শ্রেণির উপজেলা রাজস্ব অফিসারের উপর অর্পিত হয়। তবে প্রথম শ্রেণীর উপজেলা রাজস্ব অফিসার নিয়োগ বা পদায়ন না হওয়ায় অফিস দু’টি স্বতন্ত্রভাবে পরিচালিত হতে থাকে।
১৯৮৫ সালের ৪ ডিসেম্বর ভূমি প্রশাসন এবং ভূমি সংস্কার মন্ত্রণালয়ের SRO 500-L/85 / IV 44/85 দ্বারা ভূমি ব্যবস্থাপনা বিভাগে উপজেলা রাজস্ব কর্মকর্তা এবং কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা ১৯৮৫ জারি করা হয়। উক্ত বিধিমালার সংযুক্ত তফসিলে বর্ণিত (I) নং ক্রমিকে উপজেলা রাজস্ব অফিসারের পদটি বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের সদস্যদের জন্য
নির্ধারিত রাখা হয়েছে। এ বিধিমালা মোতাবেক ১৯৮৮ সালে সর্বপ্রথম ১৭০ জন বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা উপজেলা রাজস্ব অফিসার পদে নিয়োগ/পদায়ন করা হয়। পদায়নকালে তাদের পদবী উপজেলা রাজস্ব অফিসারের পরিবর্তে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ব্যবহার করা হয়। তৎপ্রেক্ষিতে নবনিযুক্ত সহকারী কমিশনার (ভূমি) গণই রাজস্ব অফিসার হিসেবে গণ্য হন এবং আইন ও বিধিতে বর্ণিত রাজস্ব ক্ষমতা প্রয়োগের অধিকারী হন।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের ১৭/১০/১৯৮৮ তারিখের ভূঃ মঃ ১৫-২৬২/৮৮/২০৪৮ নং স্মারকে সহকারী কমিশনার (ভূমি) গণের দায়িত্ব ও কর্মপরিধি উল্লেখ করা হয়েছে। এ পরিপত্রে তহশীল অফিস তদারকি, খাস জমি বিতরণ, গুচ্ছগ্রাম সৃজন, অর্পিত ও অনাগরিক এবং পরিত্যক্ত সম্পত্তির সুষ্ঠু তদারকি, নামজারি/ জমাখারিজ, হাট-বাজার/লঞ্চ ঘাট/নৌকা ঘাট নিলাম সংক্রান্ত বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ, ভূমি উন্নয়ন কর নির্ধারণ ও আদায়, নতুন জলমহাল নীতির সুষ্ঠু বাস্তবায়ন, জলমহাল ব্যবস্থাপনা, রেন্ট সার্টিফিকেট মামলার দ্রুত নিষ্পত্তিকরণ, দেওয়ানি মামলাসমূহের আইনানুগ নিষ্পত্তি, উন্নয়ন তহবিল ও আনুষঙ্গিক ব্যয়, উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিসের তত্ত্বাবধান প্রভৃতি বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করা হয়। জি, ই, ম্যানুয়াল-১৯৫৮ এর ৫২ পৃষ্ঠা এবং ২১৭ ও ২১৮ পৃষ্ঠায় রাজস্ব অফিসারের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে জি, ই, ম্যানুয়াল বাতিল করে ১৯৯০ সালে ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল ১৯৯০ জারি করা হয়। ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়ালে সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর ভূমিকা দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে বিশদভাবে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
একবিংশ শতাব্দির শুরুতে এ্যানালগ/ম্যানুয়াল যুগের অবসান ঘটিয়ে ডিজিটাল যুগের সূচনা হয়েছে। ডিজিটাল যুগে ভূমির ক্রমবর্ধমান চাহিদা, জটিলতা, ভূমির বহুবিধ ব্যবহার, ভূমিদস্যুদের দৌরাত্ম্য, সরকারি সম্পত্তির দখল রক্ষা, জমাজমির অত্যাধিক হস্তান্তর, নকসা ও রেকর্ড হালকরণ ইত্যাদি চ্যালেঞ্জিং বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলাপূর্বক চাহিদার সাথে সঙ্গতি রেখে ভূমি মালিককে সেবা প্রদান করে একটি সুষ্ঠু ভূমি ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সহকারী কমিশনার (ভূমি) গণের ভূমিকা অপরিসীম ।
দেশের ভূমি ব্যবস্থাপনায় ডিজিটাল প্রযুক্তি ?
ই-নামজারি চালু ও হয়রানি, ভোগান্তি, দুর্নীতি প্রভৃতি বন্ধে ডিজিটালাইজেশন কার্যক্রম শুরু করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়। সন্তপর্ণে আস্তে ভূমি ব্যবস্থাপনার সবকিছুই নিয়ে আসা হচ্ছে অনলাইনে। ফলে কামরায় বসেই ইন্টারনেটে ভূমির নিবন্ধন, নামজারি, খাজনাসহ সব ধরনের কাজ করা যাচ্ছে। এতে সময়, শ্রম তার সাথে খরচ—সবই সাশ্রয় হচ্ছে। কৃষিখেত মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে থাকা তথ্য অনুযায়ী কৃষিখেত ব্যবস্থাপনার ডিজিটালাইজেশন কার্যক্রম সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক—
ভূমি ব্যবস্থাপনা অটোমেশন প্রকল্প ?
ভূমি ব্যবস্থাপনাকে সম্পূর্ণরূপে ডিজিটাল করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার তথা ভূমি মন্ত্রণালয় হতে নানা উদ্যোগ হাতে নেয়া হয়েছে। ভূমি সংস্কার বোর্ড ডিজিটালাইজেশনের এই উদ্যোগকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের A2i প্রজেক্টের সহযোগিতায় ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থা LISF (Land Information Service Frame work) LIMS (Land Information Managment System) এর সফট্ওয়্যার তৈরিসহ প্রশিক্ষণ প্রদান অব্যাহত রেখেছে। ইতোমধ্যে সারাদেশে ১১২টি উপজেলা ভূমি অফিসে অনলাইনে ই-নামজারি কার্যক্রম শুরু হয়েছে এবং জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অবকাঠামো উন্নয়নসহ প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র ও তথ্য প্রযুক্তি সামগ্রী যথা ল্যাপটপ, প্রিন্টার, স্ক্যানার, মডেম ইত্যাদি ভূমি সংস্কার বোর্ড হতে সরবরাহ করা হয়েছে। জুন, ২০১৮ মাস হতে সারা বাংলাদেশে ই-নামজারি চালু করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের একটি নির্দেশনা রয়েছে। ভূমি ব্যবস্থাপনাকে জনবান্ধব ও সহজীকরণের উদ্দেশ্যে ভূমি মন্ত্রণালয় হতে নতুন নতুন নির্দেশনা ও প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে এবং হচ্ছে। ভূমি ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত নতুন নির্দেশনা, প্রজ্ঞাপন ও ডিজিটালকরণের পদ্ধতি ও আদেশ সংশ্লিষ্টদের অবহিতকরণের কোন বিকল্প নেই ।
চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে বাংলাদেশের ১ম ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনা চালু করা হয়েছে ।
ই-নামজারি চালু ?
বর্তমানে অনলাইনের সাহায্যে ই-নামজারি ও মিসকেস মামলার শুনানি গ্রহণ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই কার্যক্রম দেশব্যাপী পুরোপুরি চালু হলে প্রতিবছর ২০ থেকে ২২ লাখ নামজারি সহজেই করা যাবে। ফলে সালের এক কোটির অধিক ব্যক্তি এই সেবার আওতায় আসবে।
মৌজা ও প্লটভিত্তিক ভূমি জোনিং চালু
মৌজা ও প্লটভিত্তিক জমি জোনিং সুবিধার সাহায্যে ভূমির অবস্থান ও প্রকার অনুযায়ী প্লটভিত্তিক কৃষি, আবাসন, বাণিজ্যিক, পর্যটন ও শিল্প অগ্রগতি প্রভৃতি বিভাগে ভাগ করার প্রচেষ্টা নেওয়া হয়েছে। ফলে সারা দেশে কৃষিজমি রক্ষা করা পসিবল হবে। শুধু তা–ই নয়, মৌজা ও প্লটভিত্তিক মডার্ন ভূমি জোনিং ম্যাপ ও ভূমি ব্যবহারের প্রস্তুতি তৈরির পাশাপাশি সারা দেশে মৌজা ও ই-নামজারি চালু, প্লটভিত্তিক তথ্যভান্ডারও সৃষ্টি করা হবে।
ডিজিটাল রেকর্ড রুম থেকে জমির খতিয়ান সংগ্রহ ?
জমির খতিয়ান সংগ্রহে হয়রানি কমাতে ডিজিটাল রেকর্ড রুম আরম্ভ করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ২১টি জেলায় এই রেকর্ড রুম আরম্ভ করা হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে সারা কান্ট্রিতে এটা আরম্ভ হবে। ইন্টারনেটে খতিয়ান প্রদানের সাথে খতিয়ানের অটোমেটেড সার্টিফায়েড কপিও দেওয়া হবে।
- হয়রানি কমাবে ডিজিটাল রেকর্ডরুম
- দালালদের উৎপাত কমবে।
- সময় কম লাগবে।
- ভুমি অফিসে যাতাযাত কমবে।
৬১ জেলার অনলাইনে
দেশের তিন পার্বত্য জেলা বাদে ৬১টি জেলার সিএস, এসএ, আরএস ও দিয়ারা জরিপের সর্বমোট চার কোটির বহু বিষয়ানুক্রমিক হিসাবের বই অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে। পর্যায়ক্রমে অবশিষ্ট জেলাগুলোতেও আধুনিক রেকর্ড রুম চালু করা হবে।
অনলাইনে খাজনা
অনলাইনভিত্তিক জমি উন্নতি কর-ব্যবস্থার সাহায্যে জগতের যেকোনো দেশ থেকেই ভূমির (ভূমি উন্নয়ন কর) দেওয়ার সুযোগ শুরু করা হয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে প্রথম পর্যায়ে ৮টি জেলার ৯টি উপজেলার ৯টি পৌর বা ইউনিয়ন জমি অফিসের ১৯টি মৌজায় এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সারা দেশে এ অ্যাডভান্টেজ আরম্ভ করা হবে।
চালু হবে ভূমি ডেটা ব্যাংক
সারা দেশের সরকারি বিত্ত পরিদর্শনের আওতায় আনতে ‘ভূমি ডেটা ব্যাংক’ তৈরি করা হচ্ছে। এতে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তির বে-আইনি ব্যবহার কমানো সম্ভব হবে। শতভাগ খাসজমি মার্ক করার একসাথে অর্পিত ও পরিত্যক্ত প্রতিপত্তি ও সায়রাত মহালের তথ্যভান্ডার তৈরি করে ভূমি তথ্য ব্যাংক সৃষ্টি করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এটি সারা দেশে বাস্তবায়ন করা হবে।
গুগল নিউজ হতে আপডেট ” নিউজ হতে আইবাস++ ও সরকারি নিউজের আপডেট সংগ্রহ করে নিতে পারেন।
ভূমিমালিকদের আধুনিক কার্ড
জমির মালিকদের জমিসংক্রান্ত সমুদয় ইনফরমেশন নিয়ে আধুনিক কার্ড দেওয়ার প্রচেষ্টা নিয়েছে সরকার। কার্ডে জমির মালিকানার সব আধুনিক তথ্য থাকবে। ভূমি প্রয়োগ ও মালিকানা স্বত্ব নিয়মের আওতায় নাগরিকদের ‘সার্টিফিকেট অব ল্যান্ড ওনারশিপ’ বা সিএলও দেওয়া হবে, যেখানে ভূমি মালিকানার সব ইনফরমেশন থাকবে। ফলে জমির মালিকানা প্রমাণের জন্য নানারকম কাগজের দরকার হবে না।
অনলাইনে তথ্য জমির তথ্য যাচাই
সঠিকভাবে মডার্ন ভূমিসেবা দেওয়ার জন্য প্রকৃত ভূমিমালিকের আবেদনের সত্যতা অনলাইনে যাচাই করছে জমি মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি জাতীয় পরিচয়পত্রহীন নাগরিকদেরও মডার্ন ভূমিসেবা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে মন্ত্রণালয়। এ জন্য জমি মন্ত্রণালয় স্থানীয় গভর্নমেন্ট বিভাগের আওতাভুক্ত ‘রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়, আবির্ভাব ও মৃত্যুনিবন্ধন’-এর সাথে জন্ম ও মৃত্যুর তথ্য-উপাত্ত বিনিময়-সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। চুক্তির আওতায় জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য-উপাত্তের পাশাপাশি জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনের তথ্যও সম্প্রতি ভূমিসেবা ব্যবস্থাপনায় ব্যবহার করা হচ্ছে। এর ফলে রাষ্ট্রের জাতীয় পরিচয়পত্রহীন নাগরিকেরাও ভূমিসেবা গ্রহণ করতে পারছেন।
আরও জানুনঃ পে-স্কেল বাস্তবায়নের আগে সরকারি কর্মচারিদের জন্য ৫০% মহার্ঘ্য ভাতা সহ অন্যান্য দাবি সমূহ ?
২৪ ঘণ্টা ভূমিসেবা
ভূমি ব্যবস্থাপনায় আরম্ভ হয়ে গিয়েছে ‘নাগরিক ভূমিসেবা’। ফলে ১৬১২২ নম্বরে ফোন করার পাশাপাশি সোশাল যোগাযোগমাধ্যম এফবিতে (https://www.facebook.com/land.gov.bd) বার্তা পাঠিয়ে ভূমিবিষয়ক সার্ভিস পাওয়া যাচ্ছে। এটি ‘নাগরিক ভূমিসেবা ২৪/৭’ নামে পরিচিত। আধুনিক সেবার কারণে কৃষিখেত কার্যালয়ে না গিয়েই ভূমিসেবা গ্রহণ করা যাচ্ছে। এতে মানুষের অর্থ ব্যয় ও ভোগান্তি অনেকাংশে কমেছে।
রিলেটেড ট্যাগঃ ই-নামজারি চালু,
আমি বাংলাদেশ সরকারের অডিট এন্ড একাউন্টস বিভাগের একজন কর্মচারি। প্রায় এক যুগের বেশি সময় ধরে কর্মরত থাকায় বিভিন্ন অভিজ্ঞতা শেয়ার করে থাকি। তারপরও যে কোন ভুল ত্রুটি হলে তা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কোন পরামর্শ থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। ধন্যবাদ।