কবে ঘোষণা হবে নতুন পে স্কেল ২০২৪? সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ খবর ?
নবম পে স্কেলের সর্বশেষ খবর ২০২৪ ?
বাংলাদেশের সর্বপ্রথম পে স্কেল জারি হয় ১৯৭৩ সালে। তখন জাতীয় বেতন স্কেলের গ্রেড ছিল ১০টি। এরপর ৪ বছর পরে ১৯৭৭ সনে আবার পে স্কেল প্রদান করা হয়। এখান থেকে শুরু হয় ২০টি গ্রেডের প্রচলন। এরপরের পে স্কেল ছয় বছর পর অর্থাৎ ১৯৮৫ সালে প্রদান করা হয়। পে স্কেল ১৯৮৫ সালের পর পাঁচ বছর পরে ১৯৯১ জারি করা হয় । এরপর ৬ বছর পর আবার ১৯৯৭ সালে আবার জাতীয় বেতন স্কেল প্রদান করা হয়। তারপর ২০০৫ সালে জাতীয় বেতন স্কেল পুনরায় প্রদান করা হয় । ৪ বছর পর ২০০৯ সালে আবারো জাতীয় বেতন স্কেল প্রদান করা হয়। ২০১৫ সালে সর্বশেষ জাতীয় বেতন স্কেল প্রদান করা হয়। কবে ঘোষণা হবে নতুন পে স্কেল ২০২৪?
১৯৭৩ সাল হতে ২০১৫ সালের পে স্কেল সমূহ পর্যন্ত পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, ৫ থেকে ৬ বছর পর পর জাতীয় পে স্কেল স্কেল গুলো জারি হয়েছে । চলতি অর্থবছর পর্যন্ত আট বছর চলমান থাকলেও বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও সরকারের সদিচ্ছার অভাবে এখন পর্যন্ত পে স্কেল বা নবম জাতীয় বেতন ভাতাদি আদেশ জারি করা হয়নি।
আরও জানুনঃ পে ফিক্সেশন কি ? অনলাইন পে ফিক্সেশন করা নিয়ম ?
নতুন পে স্কেল ২০২৪ কবে হবে ? নবম পে স্কেলের সর্বশেষ খবর ২০২৪ ? জাতীয় বেতন স্কেলে কি ১০ টি গ্রেড নিয়ে আসা হবে ? নবম পেজ স্কেলের সম্ভাবনা কতটুকু ? বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট কি ১০ শতাংশ হবে ? বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের অগ্রগতি কি হচ্ছে ? এই পোস্টে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করর।
জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী সরকারি কর্মচারীগণ প্রতি বছর জুলাই মাসে ৫% হরে ইনক্রিমেন্ট পেয়ে থাকেন এবং বেতন বৃদ্ধির ধাপগুলো এভাবে সাজানো হয়েছে। মোট কথা বাজার মূল্যস্ফীতির সাথে বেতন বৃদ্ধির সমন্বয় হচ্ছে না। গত সাত বছরে ৪০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি হলেও মূল্যস্ফীতি বা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে ১০০% হারে। এ বছরে আরো ৫০ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধির যোগ করা যেতে পারে তাহলে সাত বছরে মূল্য বৃদ্ধি দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ পর্যন্ত ঠেকেছে এমত অবস্থায় দ্রৌমূল্য বৃদ্ধি ও জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধির ফলে নতুন পে কমিশন গঠনের মাধ্যমে নবম পে স্কেল ঘোষণাসহ অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে অন্যান্য বৈষম্য দূর করার পদক্ষেপ নেওয়া ।
আরও জানুনঃ নবম পে স্কেল ২০২৪ সহ ৭দফা দাবিসমূহ কি কি ?নবম পে স্কেলের সর্বশেষ খবর ২০২৪ ?
নূন্যতম মহার্ঘ ভাতা ছাড়া সরকারি কর্মচারীদের জীবনযাপন অসম্ভব হয়ে পড়বে। নতুন পে স্কেলে বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট অবশ্যই ১০ শতাংশের নিচে রাখা ঠিক হবে না । নতুন চাকরিজীবীদের কেউ কেউ চাকরি ছেড়ে দিচ্ছে এই কারণে যে নিচের গ্রেডে অর্থাৎ ১০ থেকে ২০ তম গ্রেডে চাকরি করে সংসার চালাতে পারছে না। বর্তমানে বাজারের সাথে সংগতি রেখে বেতন ভাতা প্রদান করা না হলে অনেক সরকারি কর্মচারী অনাহারে-অর্ধাহারে থাকবে । আবার কেউ কেউ আত্মহনয়নের পথও বেছে নিতে পারে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ২১ অক্টোবর ২০২২ তারিখে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, একটি ৪ সদস্য বিশিষ্ট পরিবারের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য ন্যূনতম ২২ হাজার টাকা প্রয়োজন। ফলে, বর্তমান পে-স্কেল অনুযায়ী প্রাপ্য বেতনে একটি পরিবারের মৌলিক চাহিদা পূরণ অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জীবনযাত্রার মান, আয়-ব্যয়ের সমন্বয় এবং মূল্যস্ফীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে নতুন পে-স্কেল প্রদানের জন্য পে কমিশন বা সার্ভিস কমিশন গঠন করা এখন জরুরি হয়ে উঠেছে।
অষ্টম জাতীয় পে কমিশনের মধ্যে অনেক অসংগতিপূর্ণ বিষয় এবং বৈষম্য বিদ্যমান রয়েছে। এই সমস্ত অসংগতি ও বৈষম্য দূর করার জন্য বাংলাদেশ সরকার ২০১৭ সালে একটি কমিটি গঠন করে, যাদের দায়িত্ব ছিল এই অসংগতি ও বৈষম্যগুলো পর্যবেক্ষণ করে একটি প্রতিবেদন আকারে জমা দেওয়ার।
আরও জানুনঃ পে ফিক্সেশন বাতিলের নিয়ম ২০২৪ ও পে ফিক্সেশন বাতিলের পদ্ধতি ২০২৪
৯ম পে কমিশন কবে তৈরী হবে ?
জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ ঘোষণার সময় স্থায়ী পে কমিশন গঠনের প্রস্তাব থাকলেও, সেটি কার্যকর করা হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে সরকারি কর্মচারীরা তাদের ৫ দফা দাবী পূরণের পাশাপাশি ৯ম স্থায়ী পে কমিশন গঠনের দাবীতে আন্দোলন করে আসছে। ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারীদের জন্য ৫০ শতাংশ মহার্ঘ্য ভাতা প্রদানসহ ৭ দফা দাবী জানিয়ে ১১-২০ গ্রেড সরকারি চাকুরিজীবী ফোরাম একটি অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে এই দাবি করেছে, যা নবম পে কমিশন গঠন এবং পে স্কেল বাস্তবায়নের আগেই কার্যকর করতে বলা হয়েছে।
এমতাবস্থায়, অবস্থায় সরকার বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় জাতীয় পে স্কেলে ঘোষণা ইঙ্গিত দিয়েছে । সামনে মানববন্ধ হয়ে গেল এবং সামনেও আরো কর্মসূচি ঘোষণা করা হচ্ছে ।
নতুন পে স্কেল ২০২৪ কবে হবে ?
নতুন পে স্কেল ২০২৪ সালে হতে পারে আপাতাত দৃষ্টিতে হতে পারে বলে মনে হচ্ছে । সরকারের আলোচনা ও দৃষ্টিভঙ্গি এমনটাই ইঙ্গিত দিচ্ছে। তাই নতুন পে স্কেল ২০২৪ শেষে অথবা ২০২৫ সালের প্রথম দিকে হতে পারে।
নবম পে স্কেলের সর্বশেষ খবর ২০২৪ মূল বিষয়বস্তু সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো:
- নতুন পে স্কেল: নবম পে স্কেল ২০২৪ সালে কার্যকর করার পরিকল্পনা চলছে এবং এতে বিভিন্ন সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণ করা হবে।
- বেতন স্কেলের পরিবর্তন: বর্তমানে ২০ টি গ্রেডের পরিবর্তে নতুন পে স্কেলে ১০ টি গ্রেডে নিয়ে আসার প্রস্তাব করা হয়েছে, যা বেতন কাঠামোকে সহজতর করবে।
- সম্ভাব্য সময়সীমা: নতুন পে স্কেল ২০২৪ সালের মধ্যেই কার্যকর হতে পারে, তবে সুনির্দিষ্ট সময়সীমা এখনো ঘোষণা করা হয়নি।
- গ্রেডের প্রভাব: ১০ টি গ্রেডে পরিবর্তন আসলে বিভিন্ন স্তরের সরকারি কর্মচারীদের বেতন কাঠামোতে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে, বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যম গ্রেডের কর্মচারীদের জন্য।
- সরকারি সিদ্ধান্ত: নতুন পে স্কেল কার্যকর করার জন্য সরকারের সিদ্ধান্ত ও বিভিন্ন প্রশাসনিক কাজের অগ্রগতির ওপর নির্ভর করছে।
আরও জানুনঃ ৯ম পে স্কেল ? ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে ৯ম পে স্কেল ও মহার্ঘ ভাতা দাবি
- বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী দাবি আদায় ঐক্য পরিষদ ৫০ শতাংশ মহার্ঘ্য ভাতাসহ ৭ দফা দাবি সংবাদ সম্মেলনে পরিষদের সমন্বয়ক মো. ছালজার রহমান এসব দাবি তুলে ধরেছেন।
- দাবিসমূহ:
- ১. পদবি ও গ্রেড পরিবর্তন: সচিবালয়ের ১৯৯৫ সালের জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী সব অধিদফতর, পরিদফতর ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের প্রধান সহকারী, উচ্চমান সহকারী, হিসাবরক্ষক এবং সাঁটলিপিকারসহ সমপদগুলোর পদবি ও গ্রেড পরিবর্তন করে যথাক্রমে প্রশাসনিক কর্মকর্তা/ব্যক্তিগত কর্মকর্তা নামকরণসহ ১০ম গ্রেডে উন্নীতকরণ এবং এক ও অভিন্ন নিয়োগবিধি প্রণয়ন করতে হবে।
- ২. টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহাল: ২০১৫ সালের পে-স্কেলের গেজেটে হরণ করা তিনটি টাইম স্কেল, সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহালসহ বেতন জ্যেষ্ঠতা পুনর্বহাল করতে হবে। সব স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে গ্রাচ্যুইটির পাশাপাশি পেনশন প্রবর্তন করতে হবে এবং বিদ্যমান গ্রাচ্যুইটি/আনুতোষিকের হার ৯০ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। পেনশন গ্রাচ্যুইটি ১ টাকার সমান ৫০০ টাকা নির্ধারণ করতে হবে।
- ৩. প্রাথমিক শিক্ষকদের গ্রেড উন্নীতকরণ: সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের আপিল বিভাগের রায় বাস্তবায়নসহ সহকারী শিক্ষকদের বেতন নিয়োগ বিধি-২০১৯ এর ভিত্তিতে ১০ম গ্রেডে উন্নীতকরণ করতে হবে। আউটসোর্সিং পদ্ধতি বাতিলপূর্বক রাজস্বখাতে স্থানান্তর করতে হবে।
- ৪. পদোন্নতি ও উচ্চতর গ্রেড: ব্লক পোস্টে কর্মরত কর্মচারীসহ সব পদে কর্মরতদের পদোন্নতি বা পাঁচ বছর পরপর উচ্চতর গ্রেড প্রদান করতে হবে। অধস্তন আদালতের কর্মচারীদের বিচার বিভাগীয় কর্মচারী হিসেবে গণ্য করতে হবে। টেকনিক্যাল কাজে নিয়োজিত কর্মচারীদের টেকনিক্যাল পদমর্যাদা দিতে হবে।
- ৫. ভাতা পুনর্নির্ধারণ ও রেশন ব্যবস্থা: বাজারমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি এবং মুদ্রাস্ফীতি বিবেচনা করে সব ভাতাদি পুনর্নির্ধারণ করতে হবে। ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারীদের জন্য রেশন ব্যবস্থার প্রবর্তন করতে হবে। চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর এবং অবসরের বয়সসীমা ৬২ বছর নির্ধারণ করতে হবে।
- ৬. বৈষম্যমূলক আদেশ বাতিল: ডেভলপমেন্ট প্রকল্পে নিয়োগকৃত কর্মচারিদের থেকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের তারিখ হতে চাকরিকাল গণনা করে টাইম স্কেল এবং সিলেকশন গ্রেড প্রদান করার সুয়োগ নেই মর্মে ২০০৮ সালের ২৪ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয়ের আদেশ বৈষম্যমূলক বাতিল করতে হবে।
আইবাস++ ও সরকারি নিউজের আপডেট পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন।
আমি বাংলাদেশ সরকারের অডিট এন্ড একাউন্টস বিভাগের একজন কর্মচারি। প্রায় এক যুগের বেশি সময় ধরে কর্মরত থাকায় বিভিন্ন অভিজ্ঞতা শেয়ার করে থাকি। তারপরও যে কোন ভুল ত্রুটি হলে তা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কোন পরামর্শ থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। ধন্যবাদ।