বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান করার উপায় ২০২৪ ? অবসর সুযোগ সুবিধা কি প্রাপ্য হবে ?
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মজীবন শেষ করার পূর্বে এবং কর্মজীবন পূর্ণ করার পরে বিভিন্ন ধরনের অবসরপ্রদান এর নিয়ম রয়েছে। বিভিন্ন প্রকার অবসর রয়েছে যেমন বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান, ঐচ্ছিক অবসরগ্রহণ, সরকার কর্তৃক অবসর বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান এবং অক্ষমতা জনিত অবসর এবং বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান সহ অন্যান্য অবসর প্রদানের কি আইন রয়েছে এবং কি কি সুবিধা প্রদান করা হয় এই বিষয়ে আজকে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব।
কি কি ধরনের অবসর রয়েছে ?
- বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান (Compulsory Retirement) ;
- ঐচ্ছিক অবসর গ্রহণ;
- সরকার কর্তৃক অবসর প্রদান;
- অক্ষমতাজনিত অবসর;
আরও জেনে নিতে পারেনঃ পারিবারিক পেনশন মঞ্জুরির প্রয়োজনীয় ফরম, সনদ ও কাগজপত্রাদি | পারিবারিক পেনশন ফরম ২.২
বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান (Compulsory Retirement):
- বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান (Compulsory Retirement): সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ৪৩ (ক) অনুযায়ী কোনো কর্মকর্তা/কর্মচারীকে ৫৯ বছর পূর্ণ হলে বাধ্যতামূলকভাবে চাকরি হতে অবসরগ্রহণ করতে হয়, এটিই বাধ্যতামূলক অবসর বলা হয়।
- সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ৪৩(খ) ধারার বিধান অনুসারে মুক্তিযোদ্ধা সরকারি কর্মচারীর বয়স ৬০ বৎসর পূর্ণ হইলে বাধ্যতামূলকভাবে অবসরগ্রহণ করতে হয়।
ঐচ্ছিক অবসর গ্রহণ কাকে বলে ?
ঐচ্ছিক অবসর গ্রহণ: সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ৪৪ ধারার বিধান মতে, (পঁচিশ) বৎসর পূর্ণ হবার পর কোনো সরকারি কর্মচারী একটি নির্দিষ্ট মেয়াদের চাকরিকাল পূর্ণ করার পর নিজের ইচ্ছানুযায়ী অবসরে গ্রহণ করতে পারে, এই অবসরকে ঐচ্ছিক অবসর বলা হয়।
ঐচ্ছিক অবসর গ্রহণের নিয়ম কি ?
ঐচ্ছিক অবসর গ্রহণের নিয়ম:
- সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ৪৪ ধারার বিধান মতে, (পঁচিশ) বৎসর পূর্ণ হলে যে কোনো সময় একজন সরকারি কর্মচারী অবসর গ্রহণের ৩০ (ত্রিশ) দিন আগে সংশ্লিষ্ট নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের লিখিতভাবে অবহিত করতে হবে।
- একবার ঐচ্ছিক অবসর আবেদন করলে আর প্রত্যাহার করা যাবে না।
- গণকর্মচারী (অবসর) বিধিমালা, ১৯৭৫ এর বিধি-৯ এর বিধানমতে কোনো সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারী সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ৪৪ ধারার অধীনে অবসর গ্রহণের আবেদন করলে ছুটি পাওনা সাপেক্ষে নিম্নোক্ত শর্তে অবসর-উত্তর ছুটি ভোগ করা যাবেঃ
অবসর-উত্তর ছুটি ভোগ করার নিয়ম ?
- যে তারিখে পিআরএল যাবেন ৩০ (ত্রিশ) দিন পূর্বে অবসর গ্রহণের আবেদন করতে হবে;
- যে তারিখে পিআরএল যাবেন, উক্ত তারিখ আবেদন পত্রে উল্লেখ করতে হবে;
- কত দিন ছুটি ভোগ করবেন তার মেয়াদ আবেদনপত্রে উল্লেখ করতে হবে; এবং
- ছুটির প্রাপ্যতার সনদ সংযুক্ত করতে হবে।
- মোট চাকরিকাল ২৫ (পঁচিশ) বৎসর পূর্ণ হলে স্বেচ্ছায় অবসরের গমন করা যাবে।
- পেনশনযোগ্য চাকরিকাল এর উপর পেনশন প্রাপ্য হবে।
- কোন কর্মকর্তা/কর্মচারিগণ ছুটিতে থাকাকালীনও আবেদন করা যাবে।
আরও জানুনঃ পেনশন কত প্রকার ও কি কি ? মৃত ব্যক্তির পেনশন কে পাবে ?
সরকার কর্তৃক অবসর প্রদান ?
- কোনো সরকারি কর্মচারী একটি নির্দিষ্ট মেয়াদের চাকরিকাল পূর্ণ করার পর যে কোনো সময় সরকার কোনো কর্মচারীকে কোনোরূপ কারণ দর্শানো ব্যতিরেকে অবসর প্রদানের ক্ষমতা সংরক্ষণ করে। উক্ত ক্ষমতা বলে অবসর প্রদানকেই সরকার কর্তৃক অবসর প্রদান হিসাবে গণ্য করা হয়।
- সরকার কর্তৃক বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান সংক্রান্ত বিধান নিম্নরূপ: (১) সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ৪৫ ধারার বিধানমতে, কোনো সরকারি কর্মচারীর চাকরির মেয়াদ ২৫ (পঁচিশ) বৎসর পূর্ণ হওয়ার পর যে কোনো সময় সরকার, জনস্বার্থে, প্রয়োজনীয় মনে করিলে কোনোরূপ কারণ না দর্শানো ছাড়াই চাকরি হতে অবসর প্রদান করতে পারবে।
- কোনো গণকর্মচারীর মোট চারা ২৫ (পঁচিশ) বৎসর পূর্ণ হলেই সরকার জনস্বার্থে যে কোনো গণকর্মচারীকে চাকরি হতে অবসর প্রদান করতে পারবে। তবে এইক্ষেত্রে পেনশন প্রাপ্য হবে পেনশনযোগ্য চাকরিকালের ভিত্তিতে। (স্মারক নং MERU-2137625, wfer: a, 241)
- অবসরপ্রদানের এই ক্ষমতা সরকার ব্যতীত অন্য কোনো নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ প্রয়োগ করতে পারবে না। সরকারের অধস্তন কোনো নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ কোনো সংগত কারণে তাহার কর্তৃক নিয়োগকৃত কোনো কর্মচারীকে অবসর প্রদান উচিত বলয়া মনে করলে উক্ত কর্তৃপক্ষ সরকারের সারির মন্ত্রণালয়ে সেই মর্মে প্রস্তাব করবে এবং সরকার সেই প্রস্তাব মন্ত্রী পর্যায়ে বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। (স্মারক নং সাবি(বিধি-৪)- ৯/৫-১৪০, তারিখ: ২০ জুন, ১৯৭৫)।
অক্ষমতাজনিত অবসর কি ?
অক্ষমতাজনিত অবসর কি:
- কোনো সরকারি কর্মচারী শারীরিক বা মানসিক বৈকল্যের কারণে প্রজাতন্ত্রের চাকরির জন্য অথবা যে চাকরিতে নিয়োজিত আছেন, উক্ত চাকরির জন্য মেডিকেল বোর্ড কর্তৃক স্থায়ীভাবে অক্ষম হিসাবে ঘোষিত হলে যে অবসর দেওয়া হয়,তাকে অক্ষমতাজনিত কারণে অবসর বলা হয়। [ বি এস আর -৩২১ ]
আরও জানুনঃ লাম গ্রান্ট কি ? মৃত কর্মচারী পরিবারকে ১৮ মাসের লাম্প গ্রান্ট অর্থ প্রদান করা যাবে কি ?
অক্ষমতাজনিত অবসর যাওয়ার নিয়ম ?
অক্ষমতাজনিত অবসর সংক্রান্ত বিধান নিম্নরূপ:
- সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ধারা ৪৬ এর বিধানমতে, কোনো সরকারি কর্মচারী শারীরিক অথবা মানসিক অসামর্থ্য বা বৈকল্যের কারণে সরকারি কর্ম সম্পাদনে নিজেকে অক্ষম মনে করলে, চাকরি হতে অবসরগ্রহণের আবেদন করতে পারবেন।
- সরকারি কর্তৃক গঠিত মেডিকেল বোর্ড কর্তৃক স্থায়ীভাবে কর্মে অক্ষম ঘোষণা করতে হবে।
- কর্তৃপক্ষ প্রয়োজন মনে করলে কর্তৃপক্ষ সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ধারা ৪৬ এর বিধানমতে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের নিকট প্রেরণ করতে পারবে।
- গঠিত মেডিকেল বোর্ড স্থায়ীভাবে অক্ষম হিসাবে ঘোষণা করিলে সরকার তাঁহাকে অক্ষমতাজনিত কারণে চাকরি হতে অবসর দিতে পারবে।
- অক্ষমতাজনিত কারণে অবসরের জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সার্টিফিকেট দাখিল করা হলে উপর সিদ্ধান্ত পেন্ডিং রাখা বা চাকরিতে বহাল রাখা কিংবা ছুটি দেওয়া যাবে না। পার্সন্যাল ম্যানুয়েল-২২.০৩৪।
শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসাবে বাধ্যতামূলক অবসর কী ?
(সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসাবে বাধ্যতামূলক অবসর হলো:
”শৃঙ্খলামূলক কারণে বিভাগীয় কার্যক্রম গ্রহণপূর্বক দণ্ড হিসাবে যে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়, তাকেই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসাবে বাধ্যতামূলক অবসর বলে”।
আরও জানুনঃ প্রতিবন্ধী সন্তানের পারিবারিক পেনশন ?
শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসাবে বাধ্যতামূলক অবসর নিয়ম কি ?
এইরূপ শাস্তিমূলক অবসর সংক্রান্ত বিধানসমূহ নিম্নরূপ:
- বাধ্যতামূলক অবসর গুরুদণ্ড হিসাবে গণ্য। অদক্ষতা, অসদাচরণ, পলায়ন দুর্নীতি ও নাশকতামূলক কার্যকলাপের জন্য বাধ্যতামূলক অবসর দণ্ড প্রদান করার বিধান রয়েছে।
- নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের নিচে অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসাবে কোনো কর্মচারীকে বাধ্যতামূলক অবসর দিতে পারে না।
- পিএসসির কর্তৃক নিয়োগকৃত ১ম ও ২য় শ্রেণীর কর্মকর্তাদের ব্যাধ্যতামূলক অবসরের জন্য অবশ্যই পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
প্রশ্ন উত্তর পূর্ব:
বাধ্যতামূলক অবসর সুযোগ সুবিধা প্রাপ্য হবে ?
- পেনশন সুবিধা প্রাপ্য হবে।
- লাম্প গ্রান্ট সুবিধা প্রাপ্য হবে না।
- পিআরএল ভোগ করার সুযোগ নেই।
ঐচ্ছিক অবসর গ্রহণের জন্য একবার আবেদন করলে কি ফেরত নেওয়া যাবে কি ?
- ঐচ্ছিক অবসর গ্রহণের জন্য একবার আবেদন করলে আর ফেরত নেওয়া সুযোগ নেই।
ঐচ্ছিক অবসর গ্রহণের জন্য কত দিন পূর্বে আবেদন করতে হবে ?
- ঐচ্ছিক অবসর গ্রহণের জন্য ৩০ দিন পূর্বে আবেদন করতে হবে।
শেষ কথাঃ সরকার কর্তৃক বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান এক ধরনের শাস্তির মতো । এটি কারোই কাম্য নয়। সবাই চায় চাকরিজীবন সুন্দর হবে শেষ করে সম্মানের সহিত অবসর গ্রহণ করতে।
আমি বাংলাদেশ সরকারের অডিট এন্ড একাউন্টস বিভাগের একজন কর্মচারি। প্রায় এক যুগের বেশি সময় ধরে কর্মরত থাকায় বিভিন্ন অভিজ্ঞতা শেয়ার করে থাকি। তারপরও যে কোন ভুল ত্রুটি হলে তা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কোন পরামর্শ থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। ধন্যবাদ।