nocomments

১২ তম গ্রেডের বেতন কত ?

১২তম গ্রেডের বেতন বাদে অন্যান্য কি কি সুবিধা রয়েছে এবং পদোন্নাতির সুযোগ রয়েছে কিনা ?

ভূমিকা: 

১২তম গ্রেডে বেতন কত: বাংলাদেশে সরকারি চাকরি অনেকের কাছে একটি আকর্ষণীয় পেশা। এর কারণ হলো স্থায়িত্ব, সম্মান, এবং বিভিন্ন আর্থিক ও সামাজিক সুবিধা। সরকারি চাকরিতে বিভিন্ন গ্রেড রয়েছে, যার মধ্যে ১২তম গ্রেড একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তর। এই গ্রেডে কর্মচারীরা একটি নির্দিষ্ট বেতন কাঠামো এবং সুযোগ-সুবিধার আওতায় কাজ করেন।

১২তম গ্রেডের বেতন, ভাতা, এবং পদোন্নতির সুযোগ সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা চাকরিপ্রত্যাশীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই গ্রেডে কর্মচারীরা কী পরিমাণ বেতন পান, তাদের জন্য কী কী সুবিধা রয়েছে, এবং তারা কীভাবে পদোন্নতি পেতে পারেন—এসব তথ্য নিয়ে আমরা এখানে বিস্তারিত আলোচনা করব।

সরকারি চাকরি সম্পর্কে আগ্রহী ব্যক্তিদের জন্য এটি একটি সহায়ক গাইড হতে পারে।

১২তম গ্রেডের বেতন ও সুবিধা

বাংলাদেশের সরকারি চাকরিতে ১২তম গ্রেডের বেতন কাঠামো অনেক আকর্ষণীয়। জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী, ১২তম গ্রেডের মূল বেতন ১১,৩০০ টাকা থেকে শুরু হয় এবং সর্বোচ্চ ২৭,৩০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

আরও জানুন: বাংলাদেশের সংবিধান কি ? সংবিধানের ধারা সমূহ ? বাংলাদেশের সংবিধানে কয়টি তফসিল আছে ?

১২তম গ্রেডে এর শুরুতে বেতন কত ?

১২তম গ্রেডের বেতন বাংলাদেশের জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী শুরু হয় ১১,৩০০ টাকা থেকে এবং সর্বোচ্চ ২৭,৩০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে1

এই গ্রেডের বেতন স্কেল নিম্নরূপ:

  • শুরুর বেতন: ১১,৩০০ টাকা
  • সর্বশেষ বেতন: ২৭,৩০০ টাকা

১২তম গ্রেডের কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া কত ?

বাড়ি ভাড়া ভাতা মূল বেতনের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়।

  • ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এলাকার জন্য ৬৭৮০/- টাকা।
  • অন্যান্য বিভাগ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নারায়ণগঞ্জ এবং সাভার, নারায়নগঞ্জ এলাকার জন্য ৫৬৫০ টাকা।
  • অন্যান্য জেলা এবং উপজেলাতে ৫০৮৫/- টাকা।
১২ তম গ্রেডের বেতন কত
১২ তম গ্রেডের বেতন কত

১২তম গ্রেডের কর্মচারীদের বেতন কত বছরে বৃদ্ধি পায় ?

  • ১২তম গ্রেডের কর্মচারীদের বেতন প্রতি বছর ১লা জুলাই বার্ষিক ইনক্রিমেন্টের মাধ্যমে বৃদ্ধি পায়। জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী, এই ইনক্রিমেন্ট মূল বেতনের ৫% হারে নির্ধারিত হয়।

  • উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো কর্মচারীর মূল বেতন ১১,৩০০ টাকা হয়, তাহলে বার্ষিক ইনক্রিমেন্টের পর তার নতুন বেতন হবে:11,300+(11,300×0.05)=11,865 টাকা।

  • এই প্রক্রিয়া চলতে থাকে যতক্ষণ না কর্মচারীর বেতন তার গ্রেডের সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছে যায়। ১২তম গ্রেডের সর্বোচ্চ মূল বেতন ২৭,৩০০ টাকা হওয়ায়, এই সীমায় পৌঁছানোর পর আর কোনো ইনক্রিমেন্ট প্রযোজ্য নয়।

  • ১২তম গ্রেডের কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির প্রক্রিয়া বার্ষিক ইনক্রিমেন্টের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী, এই প্রক্রিয়ায় কর্মচারীদের মূল বেতনের ৫% হারে বার্ষিক বৃদ্ধি কার্যকর হয়।

অন্যান্য সুবিধা

১২তম গ্রেডের কর্মকর্তারা বেতনের পাশাপাশি বিভিন্ন ভাতা ও সুবিধা পান। এগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • বাড়ি ভাড়া ভাতা: মূল বেতনের একটি নির্দিষ্ট শতাংশ হারে বাড়ি ভাড়া ভাতা প্রদান করা হয়।
  • চিকিৎসা ভাতা: সকল সরকারি কর্মচারীদের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণে চিকিৎসা ভাতা প্রদান করা হয়, যা বর্তমানে ১,৫০০ টাকা1
  • শিক্ষা ভাতা: ১ সন্তানের শিক্ষার জন্য ৫০০ টাকা এবং দুই সন্তানের জন্য ১০০০/- টাকা শিক্ষা ভাতা প্রদান করা হয়।
  • যাতায়াত ভাতা:কর্মচারীদের যাতায়াতের জন্য ৩০০/- টাকা যাতায়াত ভাতা প্রদান করা হয়।
  • টিফিন ভাতা: কর্মচারীদের জন্য টিফিনের জন্য ২০০/- টাকা পরিমাণ ভাতা প্রদান করা হয়।

আরও জানুন: কোন গ্রেডে কত পেনশন ? সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারিদের কোন গ্রেডে পেনশন কত ২০২৪ ?

১২তম গ্রেডে পদোন্নতির সুযোগ

১২তম গ্রেডের কর্মচারীদের পদোন্নতির সুযোগ রয়েছে। তারা তাদের কর্মক্ষমতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে উচ্চতর গ্রেডে পদোন্নতি পেতে পারেন। পদোন্নতির জন্য প্রয়োজন হয় নির্দিষ্ট সময় কাজ করা, প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা এবং প্রতিষ্ঠানের নীতি অনুযায়ী পদোন্নতি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া।

এই গ্রেডের কর্মকর্তারা সরকারি বিভিন্ন বিভাগে কাজ করেন এবং তাদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে উচ্চতর পদে পদোন্নতি পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।

প্রক্রিয়ার বিবরণ:

  • বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট: প্রতি বছর ১লা জুলাই তারিখে কর্মচারীরা তাদের মূল বেতনের উপর ৫% বৃদ্ধি পান। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো কর্মচারীর মূল বেতন ১১,৩০০ টাকা হয়, তাহলে বার্ষিক ইনক্রিমেন্টের পর তার নতুন বেতন হবে:11,300+(11,300×0.05)=11,865 টাকা।
  • উচ্চতর গ্রেডে পদোন্নতি: যদি কর্মচারী নির্দিষ্ট সময়ে পদোন্নতি পান না, তবে ১০ বছরের চাকরি পূর্তিতে তারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে উচ্চতর গ্রেডে উন্নীত হন এবং নতুন বেতন কাঠামো অনুযায়ী তাদের বেতন নির্ধারণ করা হয়।
  • মূল্যস্ফীতি সমন্বয়: কখনও কখনও সরকার মূল্যস্ফীতির কারণে অতিরিক্ত প্রণোদনা বা মহার্ঘ ভাতা ঘোষণা করে, যা কর্মচারীদের বেতনের সাথে যুক্ত হয়।

১২তম গ্রেডে বেতন মোট কত হবে ?

  • ১২তম গ্রেডের মোট বেতন হবে ( ১১,৩০০+৬৭৮০+১৫০০+৩০০+২০০)= ২০,০৮০/- টাকা ।

১২তম গ্রেডের চাকরি কোন গ্রেডের অন্তভূক্ত ?

  • ১২তম গ্রেডের কর্মচারীরা তৃতীয় শ্রেণীর অন্তর্গত। বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে গ্রেড অনুযায়ী শ্রেণীবিন্যাস করা হয়, যেখানে ১১ থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারীরা সাধারণত তৃতীয় বা চতুর্থ শ্রেণীর মধ্যে পড়েন ।
  • তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীদের মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক, অফিস সহকারী, কম্পিউটার অপারেটরসহ বিভিন্ন পদ অন্তর্ভুক্ত থাকে।

আরও জানুন: অফিস সহায়ক পদের ইতিহাস ? অফিস সহায়ক এর কাজ কি ২০২৪ ?

কোন কোন শর্তে ১২তম গ্রেডের বেতন প্রতি বছরে বৃদ্ধি পায় ?

১২তম গ্রেডের কর্মচারীদের বার্ষিক বেতন বৃদ্ধির জন্য নিম্নলিখিত শর্তগুলো রয়েছে:

  • বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট: কর্মচারীরা তাদের মূল বেতনের ৫% হারে বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট পান। এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যকর হয় এবং এর জন্য আলাদা আবেদন করার প্রয়োজন হয় না। তবে, যদি কোনো কর্মচারীর বিরুদ্ধে দপ্তর প্রধান আপত্তি তোলেন, তাহলে ইনক্রিমেন্ট স্থগিত হতে পারে।
  • সিলিং সীমা: কর্মচারীর বেতন তার গ্রেডের সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছালে আর বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট প্রযোজ্য হয় না। উদাহরণস্বরূপ, ১২তম গ্রেডে সর্বোচ্চ মূল বেতন ২৭,৩০০ টাকা; এই সীমায় পৌঁছানোর পর ইনক্রিমেন্ট বন্ধ হয়ে যায়।
  • চাকরির ধারাবাহিকতা: কর্মচারীকে চাকরিতে ধারাবাহিকভাবে কাজ করতে হবে এবং নির্ধারিত সময়ে কোনো শাস্তি বা স্থগিতাদেশ না থাকলে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি কার্যকর হয়।
  • ছুটির প্রভাব: বিনা বেতনে ছুটি বা স্থগিতাদেশ থাকলে বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট স্থগিত হতে পারে। তবে, ছুটি শেষে পুনরায় চাকরিতে যোগ দিলে ইনক্রিমেন্ট পুনর্বহাল হতে পারে।

উপসংহার:

সরকারি চাকরিতে ১২তম গ্রেড একটি আকর্ষণীয় স্তর যেখানে ভালো বেতন এবং বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়। নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট এবং পদোন্নতির সুযোগ এই পদের গুরুত্ব বাড়িয়ে তোলে। যারা সরকারি চাকরি করতে চান, তাদের জন্য এটি একটি চমৎকার বিকল্প।

Reply

error: Content is protected !!