বাংলাদেশের সংবিধানের মূলনীতি বা বাংলাদেশের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য কয়টি এবং কি কি ? বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের ইতিহাস ?

  

এই পোস্ট থেকে নিম্নলিখিত বিষয়সমূহ জানা যাবেঃ

  • বাংলাদেশের সংবিধানের মূলনীতি
  • বাংলাদেশের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য কয়টি এবং কি কি?
  • বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের ইতিহাস

বাংলাদেশের সংবিধানের মূলনীতি বা বাংলাদেশের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য কয়টি এবং কি কি ?

উত্তরঃ বাংলাদেশ সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগ অনুচ্চেদ ৮ (১) অনুযায়ী মূলনীতি ৪ (চার)টি ।

এগুলো হচ্ছে :

(১) জাতীয়তাবাদ  ( Nationalism)

(২) সমাজতন্ত্র (Socialism)

(৩) গণতন্ত্র ( Democracy)

(৪) ধর্মনিরপেক্ষতা ( Secularism)

বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের ইতিহাস

বাংলাদেশ সংবিধান তৈরির সংক্ষিপ্ত ইতিহাসঃ

২৬ মার্চ ১৯৭১ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়। ১০ এপ্রিল ১৯৭১ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র জারি করা হয়। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি (Proclamation of Independence) বাংলাদেশের প্রথম অন্তর্বর্তীকালীন সংবিধান। ঘোষণাপত্রটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠন প্রক্রিয়ায় প্রথম আইনি দলিল। ঘোষণাপত্রবলে একটি গণপরিষদ গঠন করা হয়। ঘোষণাপত্রটি খুব দ্রুততার সঙ্গে একটি সাদা কাগজে খসড়া করেছিলেন ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম। তিনি ঘোষণাপত্রের ভাষা ও এর আইনগত বিভিন্ন দিক নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের প্রখ্যাত আইনজীবী সুব্রত রায় চৌধুরীর সঙ্গে পরামর্শ করেছিলেন। উল্লেখ্য যে, ঘোষণাপত্রটি ২৩শে মে, ১৯৭২ তারিখে বাংলাদেশ গেজেটের অতিরিক্ত সংখ্যায় প্রকাশ করা হয়েছিল।

আরও জানুনঃ স্ত্রী মারা গেলে স্বামী আজীবন পেনশন পাবেন কি ?পেনশনারের বয়স ৬৫ বছর পূর্ণ হলে কী কী বিশেষ সুবিধা প্রাপ্য হন ? কারা আজীবন পারিবারিক পেনশন পাবেন ?

১৯৭০ সালে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তান থেকে নির্বাচিত জাতীয় পরিষদের সদস্য এবং প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যদের নিয়ে ১০ এপ্রিল ১৯৭১ কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর মহকুমার (বর্তমানে মেহেরপুর জেলা) ভবেরপাড়া গ্রামের বৈদ্যনাথ তলার আম্রকাননে (বর্তমান নাম মুজিবনগর) বাংলাদেশের গণপরিষদ গঠন করা হয়। ৭ ডিসেম্বর ১৯৭০ থেকে ১ মার্চ ১৯৭১-এর মধ্যবর্তী বিভিন্ন তারিখে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোতে বাংলাদেশ এলাকা থেকে সাবেক পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ ও পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদ থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে ‘বাংলাদেশ গণপরিষদ’ গঠিত হয়। এই গণপরিষদের উপর প্রজাতন্ত্রের জন্য একটি সংবিধান প্রণয়নের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়।

বাংলাদেশ গণপরিষদের প্রধান কাজ ছিল দুটি

১. জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের সময় স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র প্রণয়ন ও এর ভিত্তিতে সরকার গঠন করে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করা এবং

২. সংবিধান প্রণয়ন করা ।

গুগল নিউজ হতে আপডেট নিউজ সংগ্রহ করে নিতে পারেন।

.

১০ এপ্রিল ১৯৭১ কুষ্টিয়া জেলার মুজিবনগরে স্বাধীন বাংলাদেশের সরকার গঠন করা হয়।

এই সরকার ২৬ মার্চ ১৯৭১-এর স্বাধীনতার ঘোষণাকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন করে।

১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১: লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে বাংলাদেশের জনগণ মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে।

২২ ডিসেম্বর ১৯৭১ : বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার কলকাতা থেকে ঢাকায় প্রত্যাবর্তনপূর্বক নবসৃষ্ট রাষ্ট্র বাংলাদেশের শাসনভার গ্রহণ করে।

৩০ ডিসেম্বর ১৯৭১:  বাংলাদেশ সরকারের নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়।

৮ জানুয়ারি ১৯৭২ : বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন।

১০ জানুয়ারি ১৯৭২: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্তির পর লন্ডন হয়ে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেন।

১১ জানুয়ারি ১৯৭২: রাষ্ট্রপতি হিসাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘বাংলাদেশের অস্থায়ী সংবিধান আদেশ’ (Provisional Constitution Order of Bangladesh) জারি করেন। এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় অন্তর্বর্তীকালীন সংবিধান।

২২ মার্চ ১৯৭২: বাংলাদেশের জন্য একটি সংবিধান রচনার উদ্দেশ্যে ২২ মার্চ ১৯৭২ রাষ্ট্রপতি ‘বাংলাদেশ গণপরিষদ আদেশ’ নামে একটি আদেশ জারি করেন। আদেশটি ২৩ মার্চ গেজেট বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশিত হয়। উক্ত গণপরিষদ আদেশের ৭ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়, ‘গণপরিষদ প্রজাতন্ত্রের লাগিয়া একটি সংবিধান প্রণয়ন করিবে।’

এই আদেশ বাংলাদেশ সংবিধান প্রণয়নের পথে প্রথম পদক্ষেপ। ২৩ মার্চ ‘বাংলাদেশ গণপরিষদ সদস্য অ্যাসেম্বলি (সিজেশন অব মেম্বারশীপ) অর্ডার ১৯৭২ (সদস্যপদ বাতিল) আদেশ, ১৯৭২ ((কনস্টিটিউয়েন্ট (পি. ও. নম্বর ২৩ অব্ ১৯৭২)) জারি করা হয়। ১৯৭২ সালের ‘গণপরিষদ আদেশ অনুযায়ী ১৯৭০ সালের ডিসেম্বর মাসের ৭ তারিখ থেকে ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের ১ তারিখ পর্যন্ত সময়ে বিভিন্ন তারিখে (উভয় তারিখ অন্তর্ভূক্ত) এন.ই. (National East) ও পি.ই. (Provincial East) আসনে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে যাঁরা কোনো আইন দ্বারা বা আইনের অধীন অযোগ্য ঘোষিত হননি তাঁদের নিয়ে গণপরিষদ গঠনের বিধান করা হয়।

আরও জানুনঃপেনশন আবেদনের সাথে কি কি ফরম, সনদ ও কাগজপত্রাদি দাখিল করা প্রয়োজন ?

এ আইনটিতে উল্লেখিত সময়ের মধ্যে পূর্ববঙ্গে মোট ৪৬৯ টি আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এগুলোর মধ্যে এন.ই. ও পি.ই. আসনের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১৬৯ এবং ৩০০ (মোট ৪৬৯টি)। ১৬৯ টি এন.ই. আসনের মধ্যে ৭টি আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত ছিল। ৩০০টি পি.ই. আসনের অতিরিক্ত ১০টি আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত ছিল। কিন্তু ওই ১০টি পি.ই. আসনে উপরোক্ত সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। এ আইনটিতে উল্লিখিত সময়ের মধ্যে দুটি উপনির্বাচনও অনুষ্ঠিত হয়।

রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ওই নির্বাচনে ১৬৯টি এন.ই. আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসনে জয়ী হয়। অপর দুটি আসনের একটিতে পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টি (পিডিপি)-র একজন প্রার্থী এবং অপর আসনে একজন নির্দলীয় প্রার্থী জয় লাভ করেন। পি.ই. আসনগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৮৮টি, পিডিপি ২টি, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ১টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম (নেজাম-ই-ইসলামসহ) ১টি, জামাতে ইসলামী ১টি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীগণ ৭টি আসন লাভ করেন।

এন.ই. ও পি.ই. আসনে নির্বাচিত সদস্যবৃন্দের মধ্যে

অনেকেই বিভিন্ন কারণে গণপরিষদের সদস্যপদে অযোগ্য ঘোষিত হন। যেমন :

১. একজন সদস্য প্রজাতন্ত্রের লাভজনক পদ গ্রহণ করেছিলেন (সৈয়দ আবদুস সুলতান, তার নির্বাচনী এলাকা এন.ই. ৮৪। তিনি একটি দেশে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন)।

২. ৫ জন সদস্য আইনে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শপথ গ্রহণে ব্যর্থ হওয়ায় অযোগ্য ঘোষিত হন। (তারা হলেন: ক. জনাব মো: আবদুর রহমান ফকির, খ. জনাব মো: এ মতিন ভূঁইয়া, গ. জনাব এ. কে. মোশাররফ হোসেন, ঘ. মৌলভী আহমেদ সগীর শাহজাদা, এবং ঙ. জনাব অংশু প্রু চৌধুরী ।) ৩. ২ জন সদস্য বিদেশী রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করায় সদস্য হওয়ার অযোগ্য ঘোষিত হন। (নুরুল আমীন এবং মেজর রাজা ত্রিবিদ রায়।)

৪. নির্বাচনে মনোনয়দানকারী রাজনৈতিক দল থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার ৪৩ জন সদস্যের সদস্য পদ বাতিল হয়ে যায়।

৫. ৯ জন সদস্য মুক্তিসংগ্রাম চলাকালে কিংবা তার আগে মৃত্যুবরণ করেন। এ ৯ জন সদস্য হচ্ছেন :

ক. জনাব মোঃ আমজাদ হোসেন,

খ. জনাব নজমুল হক সরকার, গ. জনাব মোঃ মশিউর রহমান,

ঘ. জনাব আবদুল হক, ঙ. ডঃ জিকরুল হক,

চ. জনাব ইমান উদ্দিন,

ছ. সৈয়দ আতর আলী,

জ. জনাব এ.এফ.কে. সফদার এবং ঝ. জনাব আহমদ রফিক।

উক্ত ৯ জন সদস্যের মধ্যে প্রথম ৮ জন মুক্তিযুদ্ধকালে এবং শেষোক্তজন মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁদের মৃত্যুতে গণপরিষদের প্রথম দিনের বৈঠকে শোকপ্রস্তাব গৃহীত হয় (গণপরিষদ বিতর্ক : ১০ এপ্রিল ১৯৭২ দ্রষ্টব্য)।

৬. গণপরিষদের প্রথম বৈঠক (১০ই এপ্রিল, ১৯৭২) থেকে এর শেষ বৈঠক (১৫ই ডিসেম্বর ১৯৭২) পর্যন্ত সময়ে গণপরিষদের প্রথম স্পীকার শাহ আবদুল হামিদ ও অন্য তিনজন সদস্য মৃত্যুবরণ করেন। তাঁরা হলেন : জনাব এম.এ. গফুর, জনাব কফিল উদ্দিন চৌধুরী এবং জনাব এ.এন. হামিদুর রহমান।

৭. দুইজন সদস্য গণপরিষদের সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন। (জনাব এস.এম. আলাউদ্দিন এবং জনাব মাহমুদ হাসান খান।)

অর্থাৎ উপরোক্ত বিভিন্ন কারণে সংবিধানে স্বাক্ষরের সময় পর্যন্ত ৪৬৯ টি আসনের মধ্যে ৬৬টি আসন শূন্য ঘোষিত হয়।

ফলে, চূড়ান্ত হিসেবে সংবিধান স্বাক্ষরের সময় গণপরিষদে ৪০৩ জন সদস্য ছিলেন। অর্থাৎ ৪০৩ সদস্যবিশিষ্ট গণপরিষদ বাংলাদেশের সুমহান সংবিধান প্রণয়ন করেছেন। ৪০৩ জনের মধ্যে ৩৯৯ জন সদস্য সংবিধানে স্বাক্ষর করেন। ৪ জন সদস্যের স্বাক্ষর সংবিধানে নেই। তাঁরা হলেন :

আরও জানুনঃ পেনশন বই হারিয়ে গেলে কী করতে হবে ? বিধবা বা তালাকপ্রাপ্ত কন্যাগণ পারিবারিক পেনশন প্রাপ্য হবেন কি? পেনশনারগণ বাংলা নববর্ষ ভাতা পাবেন কি?

ক. জনাব মোঃ আজিজার রহমান [রংপুর);

খ. শ্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত [সিলেট];

গ. জনাব জালাল আহমদ [কুমিল্লা];

ঘ.শ্রী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা [ পার্বত্য চট্টগ্রাম]।

এই ৪০৩ জন সদস্যের মধ্যে ৪০০ জনই ছিলেন আওয়ামী লীগের। ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)- এর ১ জন ও বাকি ২ জন ছিলেন স্বতন্ত্র সদস্য।

৭ এপ্রিল ১৯৭২: বাংলাদেশ গণপরিষদ (সংশোধনী) আদেশ ১৯৭২ জারি করা হয়।

১০ এপ্রিল ১৯৭২: এদিন গণপরিষদ প্রথম অধিবেশনের প্রথম বৈঠকে মিলিত হন। রাষ্ট্রপতি গণপরিষদের অধিবেশন উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ৪১৪ গণপরিষদ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। ১৯৭২ সালের ১০-১১ এপ্রিল অনুষ্ঠিত অধিবেশনে গণপরিষদের কার্যপ্রণালী বিধি প্রণীত হয়।

রিলেটেড ট্যাগঃ বাংলাদেশের সংবিধানের মূলনীতি, বাংলাদেশের সংবিধানের মূলনীতি বা সংবিধানের বৈশিষ্ট্য কয়টি ও কি কি, বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের ইতিহাস

Reply

error: Content is protected !!