ভূমিকা
জাতীয় বেতন কমিশন সম্প্রতি সরকারি কর্মচারীদের নতুন বেতন স্কেল ২০২৫ এর খসড়া প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, গত ১০ বছরে মূল্যস্ফীতি ও জীবনযাত্রার ব্যয় বিবেচনা করে বেতন ৯০ থেকে ৯৭ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো প্রয়োজন। এই প্রস্তাবটি সোমবার, ২০ অক্টোবর, চূড়ান্ত করা হয়েছে।
নতুন বেতন স্কেল ২০২৫ মাধ্যমে সরকার কর্মচারীদের আর্থিক স্থিতিশীলতা, দক্ষতা বৃদ্ধি, এবং প্রশাসনিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে চায়।
নতুন বেতন স্কেল ২০২৫ সারসংক্ষেপ
প্রস্তাবিত কাঠামোতে সর্বনিম্ন মূল বেতন ২৫,০০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ১,৫০,৫৯৪ টাকা নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে। এই কাঠামোতে গ্রেডভিত্তিক বৃদ্ধির হার একে অপরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নির্ধারিত হয়েছে।
প্রধান পরিবর্তনগুলো হলো:
- ৯০–৯৭% বেতন বৃদ্ধি।
- অপ্রয়োজনীয় গ্রেড একীভূতকরণ।
- টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহাল।
- স্বাস্থ্যবিমা ও শিক্ষা সহায়তা ভাতা সংযোজন।

প্রস্তাবিত নতুন বেতন স্কেল কত মূল বেতন গ্রেড অনুযায়ী
প্রস্তাবিত নতুন বেতন গ্রেড :
| গ্রেড | প্রস্তাবিত মূল বেতন (টাকা) |
|---|---|
| গ্রেড-১ | ১,৫০,৫৯৪ |
| গ্রেড-২ | ১,২৭,৪২৬ |
| গ্রেড-৩ | ১,০৯,০৮৪ |
| গ্রেড-৪ | ৯৬,৫৩৪ |
| গ্রেড-৫ | ৮৩,০২০ |
| গ্রেড-৬ | ৬৮,৫৩৯ |
| গ্রেড-৭ | ৫৫,৯৯০ |
| গ্রেড-৮ | ৪৪,৪০৬ |
| গ্রেড-৯ | ৪২,৪৭৫ |
| গ্রেড-১০ | ৩০,৮৯১ |
| গ্রেড-১১ | ২৪,১৩৪ |
| গ্রেড-১২ | ২১,৮১৭ |
| গ্রেড-১৩ | ২১,২৩৮ |
| গ্রেড-১৪ | ১৯,৬৯৩ |
| গ্রেড-১৫ | ১৮,৭২৮ |
| গ্রেড-১৬ | ১৭,৯৫৫ |
| গ্রেড-১৭ | ১৭,৩৭৬ |
| গ্রেড-১৮ | ১৬,৯৯০ |
| গ্রেড-১৯ | ১৬,৪৪১ |
| গ্রেড-২০ | ১৫,৯২৮ |
বিকল্প “সাকুল্য বেতন কাঠামো” প্রস্তাব
নতুন কাঠামোতে “সাকুল্য বেতন” বা “পারিশ্রমিক” নামে একটি বিকল্প প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এতে কোনো ভাতা থাকবে না, বরং একক বেতনের মাধ্যমে সব আর্থিক সুবিধা অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
এই পদ্ধতি ইতিমধ্যে উন্নত দেশগুলো যেমন সিঙ্গাপুর, জাপান ও মালয়েশিয়া-তে কার্যকরভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
বিদ্যমান ভাতা ও সুবিধা বাতিলের প্রস্তাব
বর্তমানে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিভিন্ন সভা, প্রশিক্ষণ ও কমিটিতে অংশ নিয়ে অতিরিক্ত সম্মানি বা ভাতা পাচ্ছেন। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এটি আর্থিকভাবে চাপ তৈরি করছে এবং নৈতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ।
প্রতি বছর এই খাতে প্রায় ১,০০০ কোটি টাকা ব্যয় হয়, যা বাতিলের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

নতুন বেতন স্কেল ২০২৫ এ সচিবালয় ভাতা ও রেশন সুবিধা ?
সচিবালয় ভাতা ও রেশন সুবিধা চালুর প্রস্তাব করা হয়েছে সচিবালয়ে কর্মরতদের জন্য। কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, এরা সরকারের মূল নীতি বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
উল্লেখ্য, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়, প্রতিরক্ষা বাহিনী, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং বিচার বিভাগ ইতিমধ্যেই অনুরূপ ভাতা পাচ্ছে।
টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেডের পুনর্বহাল
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, টাইম স্কেল, সিলেকশন গ্রেড, বিশেষ ইনক্রিমেন্ট— এগুলো পুনর্বহাল করতে হবে। এতে কর্মচারীদের দীর্ঘমেয়াদি প্রেষণা বৃদ্ধি পাবে।
অপ্রয়োজনীয় গ্রেড বাতিল ও নতুন শ্রেণিবিন্যাস
কমিশনের মতে, বর্তমান কাঠামোয় কিছু অপ্রয়োজনীয় গ্রেড রয়েছে।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে—
- ৮ম-৯ম গ্রেড একীভূত হবে,
- ৫ম-৬ষ্ঠ গ্রেড একত্র করা হবে,
- ৪র্থ শ্রেণির জন্য দুটি গ্রেড রাখা হবে (১৯-২০ ও ১৭-১৮)।
এর ফলে কাঠামোটি আরও দক্ষ ও বাস্তবসম্মত হবে।
টিফিন ও যাতায়াত ভাতা বৃদ্ধি
বর্তমানে ১০ম গ্রেডভুক্ত কর্মচারীরা টিফিন ও যাতায়াত ভাতা পান না।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে—
- টিফিন ভাতা: ২০০ টাকা → ৩,০০০ টাকা
- যাতায়াত ভাতা: ৩০০ টাকা → ৪,৫০০ টাকা
এই প্রস্তাবটি কর্মচারীদের জীবনমান উন্নয়নে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
শিক্ষা ও চিকিৎসা সহায়তা ভাতা
প্রস্তাবে স্তরভিত্তিক শিক্ষা সহায়তা ভাতা নির্ধারণ করা হয়েছে—
| স্তর | প্রস্তাবিত ভাতা (প্রতি সন্তান) |
|---|---|
| প্রাথমিক | ২,০০০ টাকা |
| মাধ্যমিক | ৪,০০০ টাকা |
| উচ্চমাধ্যমিক | ৬,০০০ টাকা |
| স্নাতক | ৮,০০০ টাকা |
চিকিৎসা সহায়তার ক্ষেত্রে বয়স অনুযায়ী ভাতা নির্ধারণ করা হয়েছে—
- ৪০ বছর পর্যন্ত: ৫,০০০ টাকা
- ৪০–৫০ বছর: ৭,০০০ টাকা
- ৫০ বছরের ওপরে: ১০,০০০ টাকা

নববর্ষ ভাতা ও অন্যান্য উৎসব ভাতা
বর্তমানে নববর্ষ ভাতা মূল বেতনের ২০% হারে দেওয়া হয়। নতুন প্রস্তাবে এটি ৮০% করার সুপারিশ রয়েছে।
এছাড়া কর্মচারীরা মূল বেতনের ১০০% হারে দুটি উৎসব ভাতা পাবেন।
স্বাস্থ্যবিমা ও পেনশন সংস্কার
প্রস্তাবে প্রতিটি কর্মচারীর জন্য স্বাস্থ্যবিমা চালু করা, কর প্রদানের ওপর ভিত্তি করে পেনশন সুবিধা নির্ধারণ, এবং অতিরিক্ত সময় কাজের জন্য অতিরিক্ত পারিশ্রমিক দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
কমিশনের আগাম রিপোর্ট জমা পরিকল্পনা
অন্তর্বর্তী সরকার চায় ডিসেম্বরের মধ্যেই চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হোক।
এর লক্ষ্য— ভোটের আগে বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন।
সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর সাথে বৈঠক
২০ অক্টোবর জাতীয় বেতন কমিশন আটটি সংগঠনের সঙ্গে বৈঠকে বসছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য—
- বাংলাদেশ কালেক্টরেট সহকারী সমিতি
- অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ সমিতি
- স্থানীয় সরকার বিভাগ
- আইডিইবি
- বাংলাদেশ গ্রাম পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন
এই বৈঠকে প্রস্তাবের চূড়ান্ত কাঠামো নিয়ে আলোচনা হবে।
উপসংহার
সরকারি কর্মচারীদের নতুন বেতন কাঠামোর খসড়া প্রস্তাবটি বাংলাদেশের প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক সংস্কারে এক নতুন অধ্যায় সূচনা করবে।
এই কাঠামো বাস্তবায়িত হলে—
- কর্মচারীদের জীবনমান উন্নত হবে,
- প্রশাসনিক দক্ষতা বাড়বে,
- এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি স্থিতিশীল সরকারি সেবা ব্যবস্থা গড়ে উঠবে।
❓প্রশ্নোত্তর (FAQs)
১. নতুন বেতন স্কেল ২০২৫ কবে থেকে কার্যকর হবে?
👉 ডিসেম্বরের পর চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে কার্যকর হতে পারে।
২. সর্বনিম্ন বেতন কত নির্ধারণ করা হয়েছে?
👉 সর্বনিম্ন বেতন প্রস্তাব করা হয়েছে ২৫,০০০ টাকা।
৩. নতুন কাঠামোয় কি টাইম স্কেল থাকবে?
👉 হ্যাঁ, টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহালের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
৪. “সাকুল্য বেতন” মানে কী?
👉 এটি একটি একক বেতন পদ্ধতি, যেখানে ভাতা বাদ দিয়ে সব সুবিধা বেতনের সঙ্গে যুক্ত থাকবে।
৫. নববর্ষ ভাতা কত বাড়ানো হয়েছে?
👉 নববর্ষ ভাতা ২০% থেকে ৮০% করার প্রস্তাব রয়েছে।
৬. স্বাস্থ্যবিমা কি সব কর্মচারীর জন্য বাধ্যতামূলক হবে?
👉 হ্যাঁ, সরকারি সকল কর্মচারীর জন্য বাধ্যতামূলক স্বাস্থ্যবিমা চালুর সুপারিশ রয়েছে।

আমি বাংলাদেশ সরকারের অডিট এন্ড একাউন্টস বিভাগের একজন কর্মচারি। প্রায় এক যুগের বেশি সময় ধরে কর্মরত থাকায় বিভিন্ন অভিজ্ঞতা শেয়ার করে থাকি। তারপরও যে কোন ভুল ত্রুটি হলে তা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কোন পরামর্শ থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। ধন্যবাদ।