এক সঙ্গে নেওয়া যাবে কি অধ্যয়ন ছুটি বনাম শ্রান্তি বিনোদন ছুটি ? এক সঙ্গে দুটি ছুটি! কেন ‘অধ্যয়ন’ ও rest and recreation leave নেওয়া যায় না?
অধ্যয়ন ছুটি কী ? সংজ্ঞা ও উদ্দেশ্য
অধ্যয়ন ছুটি হলো সরকারি বা আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠানের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে উচ্চতর শিক্ষা, গবেষণা, প্রশিক্ষণ কিংবা দক্ষতা উন্নয়নের জন্য নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দেওয়া ছুটি। এর মূল উদ্দেশ্য হলো—
- কর্মচারীর জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি,
- পেশাগত দক্ষতা উন্নয়ন,
- প্রতিষ্ঠানের সার্বিক কার্যক্রমে নতুন জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার সংযোজন।
সাধারণত অধ্যয়ন ছুটি ১ বছর থেকে ৩ বছর পর্যন্ত হতে পারে এবং এটি গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন অপরিহার্য।

শ্রান্তি বিনোদন ছুটি কী?
শ্রান্তি বিনোদন ছুটি বা “শ্রান্তি ছুটি” হলো সরকারি চাকরিতে দীর্ঘ সময় কাজ করার পর একজন কর্মচারীর শারীরিক ও মানসিক বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ। এটি এক ধরনের অর্জিত সুবিধা।
- সাধারণত প্রতি ৩ বছর পর পর এ ছুটি পাওয়া যায়।
- এর লক্ষ্য হলো কর্মচারীর শারীরিক ও মানসিক পুনরুজ্জীবন নিশ্চিত করা।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী অধ্যয়ন ছুটি ?
বাংলাদেশ সরকারের সরকারি কর্মচারী বিধিমালা অনুসারে অধ্যয়ন ছুটি একটি বিশেষ ছুটির ধরন।
- এটি সাধারণ ছুটি বা অর্জিত ছুটির মতো নয়।
- অধ্যয়ন ছুটি ভোগকালে বেতন, ভাতা এবং চাকরির অন্যান্য সুবিধা বজায় থাকে।
- তবে শর্ত হলো কর্মচারীকে শিক্ষা সম্পন্ন করে পুনরায় দায়িত্বে যোগ দিতে হবে।
শ্রান্তি বিনোদন ছুটির সরকারি বিধান ?
শ্রান্তি বিনোদন ছুটি সম্পর্কিত সরকারি প্রজ্ঞাপনে বলা আছে—
- এটি এক ধরনের “once in service” সুবিধা।
- একই সময়ে অন্য কোনো বিশেষ ছুটির সঙ্গে এটি মিলিত করে নেওয়া যায় না।
- এ ছুটি ভোগের সময় কর্মচারীকে দেশ বা বিদেশে থাকার স্বাধীনতা দেওয়া হয়।
একসঙ্গে নেওয়ার চেষ্টার বাস্তব উদাহরণ ?
এক কর্মকর্তা অধ্যয়ন ছুটি চলাকালীন সময়ে পুনরায় শ্রান্তি বিনোদন ছুটি ভোগ করতে চেয়েছেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে—
- অধ্যয়ন ছুটি ইতোমধ্যেই একটি অনুমোদিত ছুটি।
- তাই একই সময়ে শ্রান্তি বিনোদন ছুটি গ্রহণ করা যাবে না।
এটি বাস্তব উদাহরণ হিসেবে আমাদের পরিষ্কার করে যে দুই ধরনের ছুটি একইসঙ্গে অনুমোদিত হয় না।
কেন অধ্যয়ন ছুটি ও শ্রান্তি বিনোদন ছুটি ভিন্ন ধরণের ?
এই দুই ধরনের ছুটি প্রকৃতিগতভাবে ভিন্ন—
- অধ্যয়ন ছুটি হলো প্রশিক্ষণ/শিক্ষা নির্ভর।
- শ্রান্তি বিনোদন ছুটি হলো বিশ্রাম/পুনরুজ্জীবন নির্ভর।
- তাই উভয়ের উদ্দেশ্য, নীতি ও প্রয়োগ ভিন্ন।

আইন ও বিধিমালায় কি রয়েছে ?
সরকারি বিধিমালায় স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে—
- এক ধরনের বিশেষ ছুটি চলাকালীন অন্য কোনো বিশেষ ছুটি অনুমোদন করা যাবে না।
- এটি প্রশাসনিক জটিলতা ও আর্থিক অসঙ্গতি এড়ানোর জন্য রাখা হয়েছে।
প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ ?
প্রশাসনিকভাবে একসঙ্গে দুটি ছুটি অনুমোদিত হলে—
- কর্মচারীর উপস্থিতি কমে যায়,
- বিভাগীয় কাজ ব্যাহত হয়,
- আর্থিক দায় বাড়ে।
তাই প্রশাসন কখনও একসঙ্গে দুটি দীর্ঘমেয়াদি ছুটি অনুমোদন করে না।
একসঙ্গে ছুটি নিলে সম্ভাব্য প্রভাব ?
যদি অধ্যয়ন ছুটি ও শ্রান্তি বিনোদন ছুটি একসঙ্গে নেওয়ার সুযোগ থাকত, তাহলে—
- কর্মচারী একই সময়ে দ্বিগুণ সুবিধা ভোগ করতেন।
- কর্মক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় শূন্যতা তৈরি হতো।
- আর্থিক ব্যয় বৃদ্ধি পেত।
বিকল্প ব্যবস্থা বা সমাধান
কর্মচারী চাইলে—
- অধ্যয়ন ছুটি শেষে সরাসরি শ্রান্তি বিনোদন ছুটি আবেদন করতে পারেন।
- অথবা অধ্যয়ন শেষে কিছু বছর চাকরিতে থেকে পরে শ্রান্তি বিনোদন ছুটি নিতে পারেন।
এভাবে দুটি সুবিধা যথাযথভাবে ভোগ করা সম্ভব।
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে ছুটির ধরন
বিশ্বের অনেক দেশে (যেমন ভারত, পাকিস্তান, যুক্তরাজ্য) অধ্যয়ন ছুটি ও বিনোদন ছুটি আলাদাভাবে ব্যবহৃত হয়।
- ইউরোপে “Sabbatical leave” রয়েছে, যা বাংলাদেশের শ্রান্তি ছুটির মতো।
- তবে সব জায়গায় অধ্যয়ন ছুটি ও বিনোদন ছুটি একসঙ্গে অনুমোদিত হয় না।
FAQs: অধ্যয়ন ও শ্রান্তি বিনোদন ছুটি
প্রশ্ন ১: অধ্যয়ন ছুটি কত দিনের হতে পারে?
উত্তর: সাধারণত ১ বছর থেকে ৩ বছর পর্যন্ত হতে পারে।
প্রশ্ন ২: শ্রান্তি বিনোদন ছুটি কতবার নেওয়া যায়?
উত্তর: প্রতি তিন বছর পর পর এ ছুটি প্রাপ্য।
প্রশ্ন ৩: অধ্যয়ন ছুটি চলাকালীন শ্রান্তি ছুটি নেওয়া যাবে কি?
উত্তর: না, সরকারি বিধি অনুযায়ী সম্ভব নয়।
প্রশ্ন ৪: শ্রান্তি বিনোদন ছুটি কি বিদেশে কাটানো যায়?
উত্তর: হ্যাঁ, অনুমতি থাকলে বিদেশেও কাটানো যায়।
প্রশ্ন ৫: অধ্যয়ন ছুটি শেষে কি সরাসরি শ্রান্তি ছুটি নেওয়া যাবে?
উত্তর: হ্যাঁ, অনুমোদন সাপেক্ষে নেওয়া সম্ভব।
প্রশ্ন ৬: দুটো ছুটি একসঙ্গে না পাওয়ায় কর্মচারীর ক্ষতি হয় কি?
উত্তর: না, বরং প্রশাসনিক শৃঙ্খলা বজায় থাকে এবং কর্মচারী আলাদা সময়ে দুটো সুবিধা ভোগ করতে পারেন।
শ্রান্তি বিনোদন ছুটি বনাম অধ্যয়ন ছুটি (তুলনামূলক ছক)
| বিষয় | শ্রান্তি বিনোদন ছুটি | অধ্যয়ন ছুটি |
|---|---|---|
| উদ্দেশ্য | দীর্ঘদিন চাকরির পর শারীরিক ও মানসিক বিশ্রাম নিশ্চিত করা | উচ্চশিক্ষা, গবেষণা বা দক্ষতা উন্নয়নের জন্য সময় প্রদান |
| প্রাপ্তির শর্ত | প্রতি তিন বছর পর পর এ ছুটি প্রাপ্য | কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নেওয়া যায় |
| সময়কাল | ১৫ দিন | ১ থেকে ৩ বছর (কখনও কখনও বিশেষ পরিস্থিতিতে বাড়ানো যায়) |
| বারবার নেওয়া যায় কি না | প্রতি তিন বছর পর পর এ ছুটি প্রাপ্য | হ্যাঁ, প্রয়োজন ও অনুমোদন সাপেক্ষে একাধিকবার সম্ভব |
| বেতন/ভাতা | চাকরির গ্রেড অনুযায়ী বেতন ও ভাতা চলমান থাকে | বেতন-ভাতা সাধারণত চালু থাকে, তবে কখনও কখনও শর্তসাপেক্ষ হতে পারে |
| প্রয়োগ ক্ষেত্র | বিশ্রাম ও মানসিক পুনরুজ্জীবন | পড়াশোনা, গবেষণা, উচ্চতর প্রশিক্ষণ |
| বিদেশে কাটানো যায় কি না | হ্যাঁ, অনুমোদন সাপেক্ষে বিদেশেও ভোগ করা যায় | হ্যাঁ, বিদেশে পড়াশোনা বা প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহার করা যায় |
| একসঙ্গে অন্য ছুটি নেওয়া যায় কি না | না, অন্য বিশেষ ছুটির সঙ্গে মিলিয়ে নেওয়া যায় না | না, শ্রান্তি ছুটি বা অন্য বিশেষ ছুটির সঙ্গে একসঙ্গে নেওয়া যায় না |
| স্বভাবগত ধরন | বিনোদন/বিশ্রাম নির্ভর | শিক্ষা/প্রশিক্ষণ নির্ভর |
উপসংহার ও সুপারিশ
অধ্যয়ন ছুটি এবং শ্রান্তি বিনোদন ছুটি উভয়েরই নিজস্ব গুরুত্ব রয়েছে, কিন্তু এদের উদ্দেশ্য ও প্রকৃতি ভিন্ন। সরকারি নিয়ম অনুসারে, দুটি বিশেষ ছুটি একসঙ্গে নেওয়া আইনসম্মত নয় এবং এটি প্রশাসনিক জটিলতা সৃষ্টি করে। সুতরাং, একজন সরকারি কর্মচারীর উচিত এই ছুটিগুলো আলাদাভাবে এবং সঠিক নিয়ম মেনে পরিকল্পনা করা। এতে যেমন প্রশাসনিক শৃঙ্খলা বজায় থাকবে, তেমনি কর্মচারীও তার প্রাপ্য ছুটিগুলো যথাযথভাবে ভোগ করতে পারবেন
সুপারিশ হলো—
- কর্মচারীদের ছুটি সংক্রান্ত নিয়ম সম্পর্কে সচেতন করা,
- ছুটি পরিকল্পনা আগেই ঠিক করা,
- প্রশাসন যেন সহজ প্রক্রিয়ায় অনুমোদন দেয়।
এভাবে কর্মচারীও উপকৃত হবেন এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমও নির্বিঘ্ন চলবে।

আমি বাংলাদেশ সরকারের অডিট এন্ড একাউন্টস বিভাগের একজন কর্মচারি। প্রায় এক যুগের বেশি সময় ধরে কর্মরত থাকায় বিভিন্ন অভিজ্ঞতা শেয়ার করে থাকি। তারপরও যে কোন ভুল ত্রুটি হলে তা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কোন পরামর্শ থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। ধন্যবাদ।