সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীগণের বিভিন্ন পারিবারিক প্রয়োজনে ছুটি নেওয়ার প্রয়োজন হয়। তবে নৈমিত্তিক ছুটি নেওয়ার কিছু নিয়ম রয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নৈমিত্তিক ছুটির নিয়ম নিয়ম কি এবং নৈমিত্তিক ছুটির বিধানের সাথে প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষকদের ছুটির আলাদা কোন নিয়ম আছে কিনা এবং পঞ্জিকা বছরে কত দিন ছুটি নেওয়া যায় এবং একসাথে কতদিনের সর্বোচ্চ কত দিন নৈমিত্তিক ছুটি নেওয়া যায় এবং ২ সাপ্তাহিক ছুটি বা সরকারি ছুটির আগে বা পরে নৈমিত্তিক ছুটি নেয়া যাবে কিনা এবং নৈমিতিক ছুটি নিয়ে কত দূর দূরত্ব ভ্রমণ করা যাবে এবং সদর দপ্তর ত্যাগ করা যাবে কিনা এই বিষয়গুলো আজকের বিস্তারিত জানার চেষ্টা করব। আশা করি পোস্ট শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়লে সম্পর্ণ ধারণা পেয়ে যাবেন।
নৈমিত্তিক ছুটি কি ?
- যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে কর্মস্থলে অনুপস্থিত কালকে নৈমিত্তিক ছুটি বলা হয়। এই প্রকার ছুটিতে অনুপস্থিত কর্মকর্তার কার্য পালনের জন্য কোনো বদলির ব্যবস্থা করা হয় না। তাই নৈমিত্তিক ছুটিভোগকারী কর্মচারীর অনুপস্থিতির কারণে যদি জনস্বার্থ ক্ষুন্ন হয়, তাহা হইলে ছুটি প্রদানকারী ও ছুটিভোগকারী কর্মচারী উভয়েই দায়ি থাকবেন।
শিক্ষকদের নৈমিত্তিক ছুটি ?
- প্রাথমিক বিদ্যায়ের শিক্ষকদের এক পুঞ্জিকা বর্ষে ২০দিনের নৈমিত্তিক ছুটির নিয়ম রয়েছে। সহাকরি শিক্ষক অথবা প্রধান শিক্ষকগণ বছরে ২০ দিনের নৈমিত্তিক ছুটি ভোগ করতে পারে। স্কুলের সহকারি শিক্ষকদের নৈমিত্তিক ছুটির আবেদনের প্রক্ষিতে প্রধান শিক্ষক নৈমিত্তিক ছুটি অনুমোদন করতে পারে। নৈমিত্তিক ছুটির আবেদন ফরম অথবা হাতে লিখে আবেদন করতে হয়।
নৈমিত্তিক ছুটির নীতিমালা ২০২৪ ?
- পঞ্জিকা বছরে একজন সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারীগণ সর্বমোট ২০ (বিশ) দিন নৈমিত্তিক ছুটি ভোগ করিতে পারিবেন।
- কোনো সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারীকে একসঙ্গে ১০ (দশ) দিনের বেশি নৈমিত্তিক ছুটি প্রদান করা যাবে না। তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ২৫ ফ্রেব্রুয়ারি, ১৯৮২ তারিখের বিজ্ঞপ্তি নং ইডি(রেগ-৬)/ছুটি-১৩/৮০-১৪ অনুযায়ী পার্বত্য জেলায় কর্মরত সকল সরকারি কর্মচারী এক বৎসরের মঞ্জুরযোগ্য ২০ (বিশ) দিনের সর্বোচ্চ নৈমিত্তিক ছুটি একইসঙ্গে ভোগ করিতে পারিবে।
- কোনো কর্মকর্তা/কর্মচারী আবেদনের প্রক্ষিতে সর্বোচ্চ ৩ (তিন) দিনের নৈমিত্তিক ছুটি এক বা একাধিকবার সাপ্তাহিক ছুটি অথবা অন্য কোনো সরকারি ছুটির পূর্বে অথবা পরে সংযুক্ত করে নৈমিত্তিক নেওয়া যাবে।
- নৈমিত্তিক ছুটি উভয় দিকে সরকারি ছুটির সহিত সংযুক্ত করে নেওয়া যাবে না। অর্থাৎ আপনি যদি সপ্তাহিক ছুটির সাথে মিলিয়ে ছুটি নিতে চান তাহলে যে কোন একদিকে সংযুক্ত করে ছুটি নেওয়া যাবে। যেমন আপনি যদি সপ্তাহিক ছুটি সাথে মঙ্গলবার,বুধবার, বৃহঃপতিবার সাথে শুক্রবার, শনিবার মিলিয়ে ছুটি নিতে পারবেন।
- আবার শুক্রবার, শনিবারের মিলিয়ে রবিবার, সোমবার, মঙ্গলবারের সাথে মিলিয়ে ছুটি নিতে পারবেন।
- কিন্তু বৃহঃপতিবার সাথে রবিবার, সোমবার ছুটি নিলে শুক্রবার, শনিবার সহ ৫দিনের ছুটি নিতে হবে।
- কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া নৈমিত্তিক ছুটিভোগকারী কোনো কর্মকর্তা/কর্মচারী সদর দপ্তর ত্যাগ করতে পারবেন না।
- কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া নৈমিত্তিক ছুটিতে থাকাকালীন কোনো কর্মকর্তা/কর্মচারী সদর দপ্তর হতে এমন দূরত্বে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া যাবে না, যেখান হতে সদর দপ্তরে কাজে যোগদানের আদেশ পাওয়ার পর কাজে যোগদান করিতে ৪৮ (আট চল্লিশ) ঘন্টার অধিক সময় লাগতে পারে।
- নিয়মিত ছুটি মঞ্জুরকারী কর্তৃপক্ষ অথবা অধস্তন ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তাবৃন্দ নৈমিত্তিক ছুটির সদর দপ্তর ত্যাগের অনুমতি প্রদান করতে পারবেন। গুরুতর অসুস্থতা, বিশেষ করিয়া সংক্রামক ব্যাধির (যেমন গুটি বসন্ত) ক্ষেত্রে কাজে যোগদানের আদেশ পাওয়ার সাথে সাথে যোগদান করা সম্ভব না হলে নৈমিত্তিক ছুটি মঞ্জুর করা যাবে না।
- পারিবারিক কারণে, সামান্য অসুস্থ হলে বিভিন্ন কারণে নৈমিত্তিক ছুটি মঞ্জুর করা যাবে।
- নৈমিত্তিক ছুটিতে থাকার সময়ে বিদেশে গমন করা যাইবে না।
আরও জানুনঃ বেসরকারি মাদ্রাসার শিক্ষকদের ছুটি বিধি ১৯৭৯ এবং মাদ্রাসার শিক্ষকদের নৈমিত্তিক ছুটি ?
- সরকারি কাজে অথবা প্রশিক্ষণার্থে বাংলাদেশের বাহিরে অবস্থানরত কর্মচারীগণকে নৈমিত্তিক ছুটি প্রদান সরকার নিরুৎসাহিত করে। তবে কেবল বিশেষ পরিস্থিতিতে উপরোক্ত শর্ত সাপেক্ষে নৈমিত্তিক ছুটি প্রদান করা যাবে। (জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি নং ইডি(রেগ-৬)/ছুটি-১৪/৮১-২৪ (৫০০১), তারিখ : ৮ এপ্রিল, ১৯৮২ এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আদেশ নং সম(রেগ-৫)-৪৩১/৮৩-১০/(৫০০), তারিখ: ২৯ মে, ১৯৮৪)
- নৈমিত্তিক ছুটি প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশ সার্ভিস রুলস্ স্বীকৃত কোনো ছুটি নয়। বাংলাদেশ সার্ভিস রুলস্ এর বিধি-১৯৫ এর নোট-(২) এর প্রেক্ষিতে এই প্রকার ছুটি প্রদান করা হয়।
- বাংলাদেশ সার্ভিস রুলস্ এবং নির্ধারিত ছুটি বিধিমালা, ১৯৭৯ তে যে সকল ছুটির বিধান আছে, তার সাথে নৈমিত্তিক ছুটির যথেষ্ঠ পার্থক্য রয়েছে।
- নৈমিত্তিক ছুটির সময়কে কর্মরত হিসাবে গণ্য করা হয়।
- ছুটি হতে প্রত্যাবর্তনের পর যোগদানপত্র দাখিল করিতে হয় না।
- তাছাড়া হঠাৎ উদ্ভুত কোনো অতি সাময়িক কারণে যথা- সর্দি, জ্বর, জরুরী ব্যক্তিগত বা পারিবারিক প্রয়োজনে এই ছুটি প্রদান করা হয়।
- নৈমিত্তিক ছুটি বর্ধিত করণের বিধান নাই ।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নৈমিত্তিক ছুটির নিয়ম কি ?
- প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নৈমিত্তিক ছুটির নিয়ম এবং সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারিদের নৈমিত্তিক ছুটির নিয়ম একই।
নৈমিতিক ছুটি কি বিধিমালা স্বীকৃত ছুটি?
- নৈমিতিক ছুটি ছুটিবিধিমাল স্বীকৃত ছুটি নয়।
সকল কর্মকর্তা/কর্মচারীকে এক বছরে কত দিন কত দিনের ছুটি ভোগ করতে পারে ?
- কর্মকর্তা/কর্মচারীকে এক বছরে ২০ দিনের ছুটি ভোগ করে থাকে।
নৈমিত্তিক ছুটি কে মঞ্জুর করবে ?
- নিয়মিত ছুটি মঞ্জুরকারী কর্তৃপক্ষ অথবা অধস্তন ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তাবৃন্দ নৈমিত্তিক ছুটির সদর দপ্তর ত্যাগের অনুমতি প্রদান করতে পারবেন।
সাত দিন বা ১০ দিনের ছুটি নিলে কি মেডিকেল সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে ?
- নিয়মিত ছুটির জন্য মেডিকেল সার্টিফিকেটের প্রয়োজন হয় না।
নৈমিত্তিক ছুটি কালীন অসুস্থ হলে করণীয় কি ?
- নৈমিত্তিক ছুটি কালীন অসুস্থ হলে অর্জিত ছুটি নিতে হবে।
নৈমিত্তিক ছুটি নাকি বিদেশ যাওয়া যাবে ?
- বিদেশ গমন করা যাবে না নৈমিত্তিক ছুটি নিয়ে ।
নৈমিত্তিক ছুটি নিয়ে সর্বোচ্চ কত দূরত্বে যাওয়া যাবে ?
- সদর দপ্তরে কাজে যোগদানের আদেশ পাওয়ার পর কাজে যোগদান করিতে ৪৮ (আট চল্লিশ) ঘন্টার অধিক সময় লাগতে পারে এমন দূরত্বে যাওয়া যাবে না।
সরকারি ছুটির সাথে কি নৈমিত্তিক ছুটি যোগ করা যাবে কিনা ?
- সরকারি ছুটির সাথে যে কোন একদিকে ছুটি নেওয়া যাবে । উভয়দিকে ছুটি নেওয়া যাবে না।
- নৈমিত্তিক ছুটির নীতিমালাঃ ডাউনলোড
শেষ কথাঃ বিভিন্ন পারিবারিক প্রয়োজনে নৈমিত্তিক ছুটি নেওয়ার দরকার হয়। প্রাথমিক বিদ্যালয় ছুটির আলাদা কোন নিয়ম নেই। নৈমিত্তিক ছুটির নিয়মাবলী সকল কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য একই। তবে তবে সম্ভব হলে ছুটি অনুমোদন নিয়েই সদর দপ্তর ত্যাগ করা উচিত।
আমি বাংলাদেশ সরকারের অডিট এন্ড একাউন্টস বিভাগের একজন কর্মচারি। প্রায় এক যুগের বেশি সময় ধরে কর্মরত থাকায় বিভিন্ন অভিজ্ঞতা শেয়ার করে থাকি। তারপরও যে কোন ভুল ত্রুটি হলে তা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কোন পরামর্শ থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। ধন্যবাদ।