nocomments

সর্বজনীন পেনশন পেতে থাকবে কোন হয়রানি, চালু হবে মুঠো ফোন অ্যাপ ? সর্বজনীন পেনশন ফান্ডের টাকা বিনিয়োগ হবে লাভজনক খাতে ?

সর্বজনীন পেনশন স্কিম নিয়ে মানুষের ভিতরে ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ্য যাচ্ছে। অনেকেই জানতে চাচ্ছেন, সরকার পেনশনভোগীদের যে অতিরিক্ত অর্থ দেবে, তার নিরাপত্তা কতটুকু বা অর্থের সংস্থান হবে কীভাবে। সমস্ত প্রক্রিয়া কতটুকু ঝামেলামুক্ত হবে– এরূপ প্রশ্ন করছেন অনেকেই। জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ বলছে, জনগণের দেওয়া সর্বজনীন পেনশন ফান্ডের টাকা সর্বোচ্চ নিরাপত্তার সাথে দীর্ঘ মেয়াদে লাভজনক খাতে ইনভেস্টমেন্টের জন্য সর্বজনীন পেনশন ফান্ড ব্যবস্থাপনা নামে আলাদা ১টি বিধিমালার খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর আওতায় বিনিয়োগে তিন খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এসব বিনিয়োগে যে রোজগার হবে, তা থেকেই শতভাগ নিরাপত্তার সাথে পেনশনভোগীদের অর্থ দেওয়া সম্ভব।

গুগল নিউজ হতে আপডেট ” নিউজ হতে আইবাস++ ও সরকারি নিউজের আপডেট সংগ্রহ করে নিতে পারেন।


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বৃহস্পতিবার সর্বজনীন পেনশন স্কিমের উদ্বোধন করেন। প্রাথমিকভাবে চার ধরনের নাগরিকের জন্য প্রগতি, সুরক্ষা, সমতা ও প্রবাসী– এ চার ধরণের প্যাকেজ রাখা হয়েছে। জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইট ব্যবহার করে গতকাল সোমবার পর্যন্ত ছয় হাজারের বেশি ইউজার ১ম কিস্তি পরিশোধ করেছেন। এতে পেনশন কর্তৃপক্ষের সংখ্যায় মোট চাঁদা জমা হয়েছে ৩ কোটি টাকার বেশি। তবে অর্থ পরিশোধ করেননি, তবুও রেজিস্ট্রেশন করেছেন এইরকম সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। পেনশনের রেজিস্টার থেকে শুরু করে চাঁদা পরিশোধ– সবই ২৪ ঘণ্টা ইন্টারনেটে করা যাচ্ছে। ব্যক্তি তাদের সুবিধাজনক সময়ে রেজিস্ট্রেশন করছেন। এতে আবেদনকারীর সংখ্যাও প্রতিমুহূর্তে বাড়ছে।

আরও জানুনঃ প্রবাস, সুরক্ষা, প্রগতি ও সমতা স্কিম এ সার্বজনীন পেনশনের কত টাকা কত বছর চাঁদা প্রদান করলে কত টাকা পেনশন পাওয়া যাবে ?


জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ব্যবহারকারীদের পেনশন সুবিধা দিতে গর্ভনমেন্টের অত্যাধিক কোনো অতিরিক্ত টাকার দরকার হবে না।  ব্যবহারকারীদের চাঁদার উপর বার্ষিক ৭ হতে ৮ শতাংশ হারে মুনাফা ধরেই পেনশনের ধনের জোগান দেওয়া সম্ভব। পেনশন ফান্ডে সুবিধাভোগীদের যে অর্থ জমা হবে, সেখান থেকে কোনো অর্থ সরানো হবে না। এমনকি জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের যাবতীয় পরিচালন বাবদ রাষ্ট্রের আলাদা বাজেট থাকবে।


খসড়া বিধিমালা অনুযায়ী নিরাপদ ও দীর্ঘ মেয়াদে মুনাফা পাওয়া যায়– এরূপ খাতে ফান্ডের অর্থ ইনভেস্ট করা হবে। প্রাইমারি অবস্থায় রাষ্ট্রীয় বন্ডে বিনিয়োগ করা হবে। এ খাতে ইদানিং ৮ থেকে ৯ শতাংশ পর্যন্ত সুদ পাওয়া যাচ্ছে। তহবিল আরও সুবিশাল হলে ১টি অংশ সরকারের লাভজনক অবকাঠামো প্রকল্পে ইনভেস্ট করা হবে। এ ব্যতীত একটি অংশ ক্রেডিট রেটিংয়ের মাধ্যমে নির্ধারিত ১ম সারির ১০ সরকারী ও প্রাইভেট ব্যাংকে এ দীর্ঘমেয়াদি FDR  করে রাখা হবে।

অর্থমন্ত্রণালয়ের, অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ও জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের মেম্বার মোস্তফা বলেন, তহবিল ব্যবস্থাপনায় ১টি বিধিমালা তৈরির কাজ প্রায় চূড়ান্ত। এ ক্ষেত্রে যেসব বিনিয়োগে ঝুঁকি কম, সেগুলোকেই প্রাধান্য

দেওয়া হবে। অর্থ ইনভেস্টমেন্টের ক্ষেত্রে সব ধরনের সুরক্ষা নিশ্চিত করে সুন্দর রিটার্ন পাওয়ার ব্যপারে নজর দেওয়া হবে।

এক কিস্তি জমা দিলেও মিলবে মুনাফা ?


সরকার চাইছে, যারা পেনশন স্কিমে চাঁদা দেওয়া আরম্ভ করবেন, তারা যেন মেয়াদ পূর্ণ করেন। এরপরও যদি কেউ মেয়াদ পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত চাঁদা দিতে না পারেন, তাহলেও মুনাফাসহ জমা দেওয়া অর্থ ফেরত পাবেন। এমনকি চাঁদার এক কিস্তি দেওয়ার পর, যদি আর না দেন, তাহলেও উনি মুনাফাসহ জমা দেওয়া টাকা ফেরত পাবেন। কিন্তু যখন খুশি, তখন চাইলেই টাকা ফেরত পাওয়া যাবে না। যিনি পেনশন স্কিম গ্রহণ করবেন, তাঁর বয়স ৬০ বছর পূরণ হলেই চাঁদার অর্থ মুনাফাসহ ফেরত পাবেন। পেনশন পরিচালকবৃন্দ প্রতিবছর মুনাফার হার ঘোষণা করবে। জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে ইউজার তাঁর অদ্বিতীয় পেনশন আইডি দিয়ে প্রবেশ করে প্রতিবছর শেষে মুনাফাসহ জমা হওয়া টাকার সংখ্যা জানতে পারবেন। কোনো ইউজার পেনশন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের পর টানা ১০ বছর চাঁদা দিলেই তিনি পেনশন পাওয়ার যোগ্য হবেন। তবে গ্রাহককে পেনশন সুবিধা পেতে ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত অপেক্ষা করার জন্য হবে। এরপর জমাকৃত টাকা ও গভর্নমেন্ট ঘোষিত মুনাফার স্থিতির ভিত্তিতে ৬০ বছর বয়স হতে উনি প্রতি মাসে পেনশন পাবেন।

পেনশন পেতে ভোগান্তি থাকবে না ?



পেনশনের টাকা তুলতে গিয়ে পূর্বে পদে পদে ভোগান্তিতে পড়তে হতো সরকারি চাকরিজীবীদের। তবে পেনশন সহজীকরণ আদেশ-২০২০ জারি করে এ ক্ষেত্রে ভোগান্তি অনেকাংশেই কমিয়ে আনা হলেও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে সেবা পাওয়ার ব্যপারে এখনও নেতিবাচক মনোভাব রয়েছে। এ সিচুয়েশনে সর্বজনীন পেনশন স্কিম থেকে অর্থ প্রাপ্তি ঝামেলামুক্ত হবে কিনা, সেই প্রশ্ন করছেন অনেকে। এ প্রসঙ্গে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য  মোস্তফা সমকালকে বলেন, সরকারী চাকরিজীবীদের পেনশন পেতে এক সময় দুর্ভোগ ছিল। ইদানিং আর কোনো দুর্ভোগ নেই। এ প্রক্রিয়াকে এইরকম সরল করা হচ্ছে। আর সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি পুরোপুরি অটোমেশন হওয়ায় দীর্ঘসূত্রতা বা হয়রানির কোনো সুযোগ নেই।

চালু হবে মুঠো ফোন অ্যাপ ?



সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্তির জন্য www.upension.gov.bd সাইটে গিয়ে রেজিস্টার করা যাচ্ছে। গ্রামীণ অবস্থায় রেজিস্টার করতে সহযোগিতা করছে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার। কেউ অনলাইনে পেনশন স্কিমের জন্য নিবন্ধন করতে অসমর্থ হলে সোনালী ব্যাংকের যে কোনো শাখায়ও তা করা যাচ্ছে। তারপরও রেজিস্ট্রেশন নিয়মে কয়েকটি ঘাটতির নালিশ পাওয়া গেছে। রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া এইরকম সহজীকরণে কাজ করছে কর্তৃপক্ষ। এরই অংশ হিসেবে কিছু দিনের মধ্যে মোবাইল অ্যাপ শুরু করা হবে।

রিলেটেড ট্যাগঃ সর্বজনীন পেনশন ফান্ডের টাকা

সূত্রঃ দৈনিক সমকাল

Reply

error: Content is protected !!