গর্ভাবস্থায় বা প্রেগনেন্ট হলে নারীর শরীরের পরিবর্তন বা লক্ষণ দেখা যায় ?
গর্ভাবস্থায় বা প্রেগনেন্ট হলে নারীর শরীরের পরিবর্তন বা লক্ষণ দেখা যায় ?
গর্ভধারণের পর নারীদেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের স্বাভাবিক (Physiological) পরিবর্তন:
গর্ভধারণের পর নারীদেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে বেশ পরিবর্তন হয় । গর্ভের সন্তানের সব প্রয়োজন মেটাতে এসব পরিবর্তন হয়ে থাকে ।
গর্ভাবস্থায় ভাল্ভা (Vulva) এর পরিবর্তন :
মাসিকের রাস্তার দুপাশের নরম অংশটিকে ভাল্ভা বলে । এই ভালভায় রস জমে এবং এগুলোকে ফোলা ফোলা মনে হয় । কারো কারো দেখা যায় যে, ভাল্ভার ধমনীগুলোও ফুলে ওঠে। এসব পরিবর্তন স্বাভাবিক এবং সন্তান ভূমিষ্ঠ হবার পর এগুলো আর থাকে না । যৌননালী (Vagina) : গর্ভাবস্থায় যৌননালীর রং নিলাভ আকার ধারণ করে এবং এতে রক্ত সরবরাহও বেড়ে যায়। ফলে যৌননালী হতে স্রাব হতে পারে । দেহের এ অংশে কোন চুলকানি না থাকলে এ স্রাব নিয়ে কোন চিন্তার কারণ নেই ।
আরও জানুনঃ Pay fixation increment bd 2023 & Pay fixation verification number বের করার উপায় ?
গর্ভাবস্থায় জরায়ু (Uterus)এর পরিবর্তন :
গর্ভাবস্থায় জরায়ু বেশ বড় হয় । গর্ভপূর্বাবস্থায় একটি জরায়ুর ওজন সাধারণত ৫০ গ্রাম এবং লম্বায় ৫-৭ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে । আর গর্ভাবস্থায় শেষ দিকে এর ওজন বেড়ে দাঁড়ায় ৯০০-১০০০ গ্রাম এবং লম্বায় দাঁড়ায় ৩৫ সেন্টিমিটার। দুভাবে জরায়ুর এ বৃদ্ধি হয়ে থাকে। জরায়ুর কোষের সংখ্যা বাড়ে, আবার এগুলোর আকারেও বৃদ্ধি পেয়ে থাকে ।
গর্ভাবস্থায় স্তন (Breast) কিকি পরিবর্তন হলে বুববেন আপনি গর্ভবর্তীঃ
গর্ভাবস্থায় স্তনেও পরিবর্তন হয় । আর এ পরিবর্তনগুলো যিনি প্রথমবারের মত মা হতে চলেছেন তার বেলায় বেশি পরিলক্ষিত হয় । স্তনের আয়তন বেড়ে যায়। স্তনের বোঁটা (Nipple) ও তার পার্শ্ববর্তী বাদামী অংশ কালো হয়ে যায় এবং এসব জায়গায় ছোট ছোট গুটির মতো
দেখা দিতে পারে। এ জায়গায় অবস্থিত গ্রন্থিগুলো বড় হওয়ার জন্যই এগুলো হয়ে থাকে । তাই এসব নিয়ে চিন্তার কোন কারণ নেই । গর্ভাবস্থায় ২২ সপ্তাহের পর হতে স্তন থেকে কিছুটা রসক্ষরণ (Secretion) হতে পারে । এ রসক্ষরণ সাধারণত সাদা থেকে হলুদ বর্ণের এবং আঠালো হয় । ত্বক (Skin) : গর্ভাবস্থায় শরীরের বিভিন্ন অংশের ত্বক কালো হয়ে যেতে পারে । বিশেষ করে পেটে ও স্তনে এ পরিবর্তন বেশি দেখা যায় । এছাড়া পেটের চামড়া এবং কারো কারো ক্ষেত্রে স্তন ও উরুর চামড়ায় ফাটা ফাটা লম্বা দাগ হয়ে যেতে পারে। গর্ভাবস্থায় পেটে ও শরীরের অন্যান্য অংশে অলিভ অয়েল ব্যবহার করলে এ দাগের কিছুটা উপশম হতে পারে । সন্তান জন্মের পর এ দাগগুলো কমে গেলেও তা একেবারে চলে যায় না ।
গুগল নিউজ হতে আপডেট ” নিউজ হতে আইবাস++ ও সরকারি নিউজের আপডেট সংগ্রহ করে নিতে পারেন।
গর্ভাবস্থায় শরীরের ওজন বৃদ্ধি (Weight Gain) :
- গর্ভাবস্থায় প্রথম দিকে বমি ও অন্যান্য কারণে খেতে না পারার জন্য ওজন কিছুটা কমে যেতে পারে ।
- একজন গর্ভবতী মহিলার সাধারণত গর্ভাবস্থায় ১২ কেজি ওজন বৃদ্ধি হয় । এর মধ্যে প্রথম ৩ মাসে ২ কেজি ও দ্বিতীয় ও তৃতীয় তিন মাসে ৫ কেজি করে ওজন বৃদ্ধি হয়ে থাকে ।
- যে সকল মহিলার ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে কম এবং যে সকল মহিলা খাটো তাদের ওজন বৃদ্ধি স্বাভাবিকের চেয়ে কম হয়ে থাকে ।
- গর্ভাবস্থায় যাদের ওজন বৃদ্ধি কম হয় তাদেরকে উন্নতমানের খাবার, বিশেষ করে মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ইত্যাদি খেতে দিলেই তাদের ওজন স্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি হতে থাকে ।
- অন্যদিকে মোটা মহিলা গর্ভাবস্থায় আরও মোটা হয়ে যেতে পারেন তখন আবার নানারকম সমস্যা হতে পারে।
- এদের খাদ্যের তালিকায় শর্করা ও চর্বি জাতীয় খাবার কম করা গেলে এদের সন্তানের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ঠিক রেখেও ওজন নিয়ন্ত্রণ করা যায় ।
গর্ভাবস্থায় বৃক্ক (Kidney) এর পরিবর্তন :
গর্ভাবস্থায় কিডনিগুলোর কাজ বহুলাংশে বৃদ্ধি পায় । এই বৃদ্ধি গর্ভাবস্থায় প্রথম দিক থেকেই শুরু হয় । আর এর ফলে ঘনঘন প্রস্রাব হয়ে থাকে ।
গর্ভাবস্থায় মূত্রথলি (Urinary Bladder) এর পরিবর্তন :
গর্ভাবস্থার শেষের দিকে জরায়ু অনেক বড় হয় এবং তখন জরায়ু মূত্রথলির ওপর চাপ দিয়ে থাকে । এর ফলে মূত্রথলির প্রস্রাব ধারণক্ষমতা কমে যায় । ফলে গর্ভবতী মহিলার ঘনঘন প্রস্রাব হয়ে থাকে ।
গর্ভাবস্থায় রক্তচাপ গর্ভাবস্থায় পরিবর্তন :
রক্তচাপ গর্ভাবস্থায় রক্তচাপ সাধারণত স্থিতিশীল থাকে । তবে দ্বিতীয় ত্রৈ- মাসিক (Second Trimester) সময়ে রক্তচাপ কিছুটা কমে গেলেও শেষ ত্রৈমাসিক (Third Trimester) সময়ে রক্তচাপ আবার স্বাভাবিক হয়ে যায় । দাঁতের মাড়ি (Gums) : গর্ভাবস্থায় দাঁতের মাড়ি ফুলে যেতে পারে এবং তা হতে রক্তক্ষরণও হতে পারে । এসব সমস্যার জন্য একজন ডেন্টাল সার্জনের পরামর্শ নেয়া যেতে পারে ।
গর্ভাবস্থায় পরিপাকতন্ত্র (Alimentary System) এর পরিবর্তন :
এ সময় খাদ্যনালী ও পাকস্থলীর সংযোগস্থলের কপাট (Sphincter) ঢিলা হয়ে যায় । যার ফলে পাকস্থলীর এসিড মিশ্রিত খাদ্যদ্রব্য খাদ্যনালীতে প্রবেশ করে আর এতে বুক জ্বালা হয় । খাওয়ার দেড় ঘণ্টা পর শুতে গেলে এবং মাথার নিচে দুটো বালিশ ব্যবহার করলে বুক জ্বালা অনেকাংশে লাঘব হয় ।
গর্ভাবস্থায় শ্বাসতন্ত্র (Respiratory System) এর পরিবর্তন :
গর্ভাবস্থায় শ্বাসতন্ত্রের ক্রিয়া প্রায় ৪০% বেড়ে যায় । এর ফলে কেউ কেউ শ্বাসকষ্ট অনুভব করতে পারেন । এ ধরনের শ্বাসকষ্ট সাধারণত ২৮ সপ্তাহ হতে ৩২ সপ্তাহের মধ্যে বেশি দেখা যায় । এই শ্বাসকষ্ট একটি স্বাভাবিক বিষয়। এর জন্য কোন চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না ।
রিলেটেড ট্যাগঃ গর্ভাবস্থার লক্ষণ কি কি, গর্ভাবস্থার পর কি মহিলার শরীর পরিবর্তন হয়, গর্ভাবস্থায় নারীর শরীরের পরিবর্তন, প্রেগনেন্ট হলে কি কি লক্ষণ দেখা যায়? প্রথম ত্রৈমাসিকে গর্ভবতী হলে কিভাবে বুঝবেন, মাসিকের কত দিন পর সহবাস করলে গর্ভবতী হয়?
আমি বাংলাদেশ সরকারের অডিট এন্ড একাউন্টস বিভাগের একজন কর্মচারি। প্রায় এক যুগের বেশি সময় ধরে কর্মরত থাকায় বিভিন্ন অভিজ্ঞতা শেয়ার করে থাকি। তারপরও যে কোন ভুল ত্রুটি হলে তা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কোন পরামর্শ থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। ধন্যবাদ।