১৪তম গ্রেডে বেতন ও ভাতাদি ও পেনশন কত প্রাপ্য হবেন ?
ভূমিকা
বাংলাদেশের সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য নির্ধারিত বেতন কাঠামো ২০১৫ সালে সর্বশেষ আপডেট করা হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারীদের পদমর্যাদা ও দায়িত্ব অনুসারে বিভিন্ন গ্রেডে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪ তম গ্রেডে কর্মরত কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা বেতন কত ? তাদের ভাতাদিসহ এবং অন্যান্য সুবিধা কী ? ১৪ তম গ্রেডের বেতন স্কেল কত ? ১৪ তম গ্রেডের পেনশন কত ? প্রাপ্য হবেন,—এসব নিয়েই আজকের বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
১৪তম গ্রেডের পদসমূহ কি কি রয়েছে ?
১৪তম গ্রেড সাধারণত তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য নির্ধারিত। এই গ্রেডে বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ও মন্ত্রণালয়ে পদ রয়েছে, যেমন:
- অফিস সহকারী
- হিসাব সহকারী
- লাইব্রেরিয়ান
- ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট
- কম্পিউটার অপারেটর
এই পদগুলোতে নিয়োগ পেতে হলে সরকারি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত অনুযায়ী আবেদন করতে হয় এবং নির্ধারিত লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়।
বাংলাদেশের ১৪তম গ্রেডের বেতন স্কেল এবং সুবিধাসমূহ কি কি ?
জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী নিয়োগকৃত ১৪ তম গ্রেডে কর্মচারিদের বেতন ও ভাতদি নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ
বাংলাদেশের ১৪তম গ্রেডের বেতন স্কেল কত ?
মূল বেতনঃ
১৪তম গ্রেডে কর্মরত সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য নির্ধারিত মূল বেতন নিন্মে দেওয়া হলোঃ
- ১৪তম গ্রেডের শুরুর বেতন: ১০,২০০ টাকা।
- ১৪তম গ্রেডের সর্বশেষ বেতন: ২৪,৬৮০ টাকা।
- বার্ষিক বৃদ্ধি: প্রতি বছর নির্ধারিত ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী মূল বেতনের ৫% হারে বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।
১৪ তম গ্রেডের বেতন স্কেল কত ?
১৪ তম গ্রেডের বেতন স্কেল : ১০২০০-১০৭১০-১১২৫০-১১৮২০-১২৪২০-১৩০৫০১৩৭১০-১৪৪০০
-১৫১২০-১৫৮৮০-১৬৬৮০-১৭৫২০-১৮৪০০-১৯৩২০-২০২৯০-২১৩১০- ২২৩৮০- ২৩৫০০-২৪৬৮০
১৪ তম গ্রেডের বেতন ও ভাতাদি ২০২৫:
- মুল ১৪তম গ্রেডে বেতনঃ ১০,২০০/- টাকা
- বাড়িভাড়া ভাতাঃ৬৪০০/- টাকা ( ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এলাকার জন্য ৬০% ও চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল, রংপুর, নারায়ণগঞ্জ ও গাজিপুর সিটি কর্পোরেশন এবং সাভার এলাকার জন্য ৫০% এবং অন্যান্য স্থানের জন্য ৪৫% )
- মেডিকেল ভাতাঃ ১৫০০/- টাকা
- টিফিন ভাতাঃ ২০০/- টাকা
- যাতায়াত ভাতাঃ ৩০০/- টাকা
১৪ তম গ্রেডের মোট বেতন কত ?
১৪ তম গ্রেডে মোট বেতন কত ?
- মোট ১৪তম গ্রেডে বেতন ভাতাদি= (১০২০০+৬৪০০+১৫০০+২০০+৩০০)=১৮,৬০০/- টাকা।
২০২২ সালে ১৪তম গ্রেডে নিয়োগকৃত অবস্থানভেদে কর্মচারিগণ নিম্ন লিখিত ভাতাদি প্রাপ্য হবেন:
যাতায়াত ভাতা এবং যাতায়াত ভাতার অর্থনৈতিক কোড-৩১১১৩০২
(১) জাতীয় বেতনস্কেল, ২০১৫ এর ১১ নং হইতে ২০ নং গ্রেডের বেসামরিক কর্মচারীর ক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশন এলাকায় কর্মস্থল হইলে তিনি ১ জুলাই ২০১৬ তারিখ হইতে মাসিক ৩০০ (তিন শত) টাকা হারে যাতায়াতভাতা প্রাপ্য হইবেন।
আরও পড়ুনঃ
সাধারণ ভবিষ্য তহবিল (জিপিএফ) অগ্রিম উত্তোলনের নিয়ম ২০২২
শিক্ষা সহায়কভাতা এবং শিক্ষা ভাতার অর্থনৈতিক কোড ৩১১১৩০৬
(১) সকল কর্মচারীর জন্য সন্তান প্রতি মাসিক ৫০০ (পাঁচ শত) টাকা হারে এবং অনধিক ২ (দুই) সন্তানের জন্য মাসিক সর্বোচ্চ ১০০০ (এক হাজার) টাকা শিক্ষা সহায়কভাতা প্রদেয় হইবে, তবে, স্বামী ও স্ত্রী উভয়ই সরকারি কর্মচারী হইলে সন্তান সংখ্যা যে কোন একজনের ক্ষেত্রেই গণনা করিয়া ভাতার পরিমাণ নির্ধারণ করিতে হইবে এবং ২১ (একুশ) বৎসর পর্যন্ত বয়সী সন্তানেরা শিক্ষা সহায়কভাতা প্রাপ্য হইবেন।
পাহাড়ি ভাতা এবং পাহাড়ি ভাতার অর্থনৈতিক কোড ৩১১১৩০৯
পার্বত্য জেলাসমূহের জেলা সদর ও সদর উপজেলায় নিযুক্ত সকল কর্মচারীর জন্য মূল বেতনের ২০% হারে সর্বোচ্চ ৩০০০ (তিন হাজার) টাকা এবং অন্যান্য উপজেলার জন্য মূল বেতনের ২০% হারে সর্বোচ্চ ৫০০০ (পাঁচ হাজার) টাকা পাহাড়িভাতা প্রদেয় হইবে।
হাওড় ভাতা এবং হাওড় ভাতার অর্থনৈতিককোড ৩১১১৩৪৩
হাওড়/চর/দ্বীপ হিসেবে ঘোষিত ১৬টি উপজেলায় কর্মরত কর্মকর্ত /কর্মচারিরা হাওড় ভাতা পেয়ে থাকেন।
১৪ তম গ্রেডের স্টাফদের পেনশন কত বা ১৪ তম গ্রেডের পেনশন কত ?
১৪তম গ্রেডের স্টাফদের পেনশনের পরিমাণঃ
যদি ১৪ তম গ্রেডে নিয়োগের পরে আপনি কোন টাইমস্কেল, উচ্চতর গ্রেড নাও পেয়ে থাকেন ১৪ তম গ্রেডের বেতন ও ভাতাদি গ্রহণ করে আপনি অবসরে যান, তাহলে ;
১৪তম গ্রেডে বেতন স্কেল: টাকা ১০২০০-১০৭১০-১১২৫০-১১৮২০-১২৪২০-১৩০৫০১৩৭১০-১৪৪০০-
১৫১২০-১৫৮৮০-১৬৬৮০-১৭৫২০১৮৪০০-১৯৩২০-২০২৯০-২১৩১০- ২২৩৮০- ২৩৫০০-২৪৬৮০
বিভিন্ন ধরনের ভাতা
সরকারি কর্মচারীদের শুধু মূল বেতনই নয়, এর পাশাপাশি বিভিন্ন ভাতাদিও প্রদান করা হয়ে থাকে। নিচে ১৪তম গ্রেডে কর্মরতদের জন্য নির্ধারিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভাতাদি তুলে ধরা হলো:
১৪তম গ্রেডে বোনাস এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা কি কি রয়েছে ?
সরকারি চাকরিজীবীরা বছরে দুটি বড় উৎসবে বোনাস পেয়ে থাকে।
- ঈদ বোনাস: ইসলাম ধর্মের অনুসারীরা দুই ঈদে মূল বেতনের সমপরিমাণ উৎসব বোনাস পেয়ে থাকে। অন্যান্য ধর্মের অনুসারীরা একসাথে দুইটি বোনাস পেয়ে থাকে।
- বৈশাখী ভাতা: মূল বেতনের ২০% পেয়ে থাকে।
- গৃহ নির্মাণ ঋণ সুবিধা: সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য স্বল্প সুদে ঋণের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।
- প্রভিডেন্ট ফান্ড সুবিধা: সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য জমানো অর্থের উপর মুনাফা পেয়ে প্রদান করা হয়।
পেনশন ও আনুতোষিক হিসাব =( শেষ বেসিক*শতকরা হার)/২
পেনশন ও আনুতোষিক হিসাব = ( ২৪৬৮০*৯০%)/২
পেনশন ও আনুতোষিক হিসাব =২২,২১২/২
এককালীন আনুতোষিকের পরিমাণ =১১,১০৬ টাকা *২৩০ টাকা
= ২৫,৫৪,৩৮০ টাকা
পেনশন মাসিক পেনশনের পরিমাণ =১১,১০৬ টাকা + মেডিকেল ভাতা-১৫০০টাকা ( ৬৫ বছরের উর্দ্ধে হলে ২৫০০/- টাকা)
নোটঃ ১৪ তম গ্রেডে নিয়োগের পরে আপনার পদোন্নতি না হলেও আপনি অবশ্যই টাইমস্কেল, উচ্চতর গ্রেড পাবেন এবং বেতনের গ্রেড পরিবর্তন হবে। এ ছাড়াও আপনি জাতীয় বেতন স্কেল পেয়ে যাবেন। তাহলে আপনার পেনশন ও আনুতোষিক কয়েক গুণ বেড়ে যাবে।
আরও পড়ুনঃ
১১তম গ্রেডে বেতন ও ভাতাদি কত ও পেনশন কত হতে পারে ?
১৪ তম গ্রেডের মোট বাড়ি ভাড়া কত ?
চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল, রংপুর, নারায়ণগঞ্জ ও গাজিপুর সিটি কর্পোরেশন এবং সাভার এলাকার জন্য বাড়ি ভাড়া ভাতার হার:
টাকা ৯৭০০ পর্যন্ত | মূল বেতনের ৬৫% হারে নূন্যতম টাকা ৫৬০০ | মূল বেতনের ৫৫% হারে ন্যূনতম টাকা ৫০০০ | মূল বেতনের ৫০% হারে হারে ন্যূনতম টাকা ৪৫০০ |
৯৭০১ হইতে টাকা ১৬০০০ পর্যন্ত | মূল বেতনের ৬০% হারে নূন্যতম টাকা ৬৪০০ | মূল বেতনের ৫০% হারে নূন্যতম টাকা ৫৪০০ | মূল বেতনের ৪৫% হারে নূন্যতম টাকা ৪৮০০ |
১৬০০১ হইতে টাকা ৩৫৫০০ পর্যন্ত | মূল বেতনের ৫৫% হারে নূন্যতম টাকা ৯৬০০ | মূল বেতনের ৪৫% হারে নূন্যতম টাকা ৮০০০ | মূল বেতনের ৪০% হারে নূন্যতম টাকা ৭০০০ |
টাকা ৩৫৫০১ তদূর্ধ্ব। | মূল বেতনের ৫০% হারে নূন্যতম টাকা ১৯৫০০ | মূল বেতনের ৪০% হারে নূন্যতম টাকা ১৬০০০ | মূল বেতনের ৩৫% হারে নূন্যতম টাকা ১৩৮০০ |
সরকারি চাকরিজীবীদের চিকিৎসা ভাতা মাসে ১৫০০/- টাকা এবং এক বছরে ১৮০০০/- টাকা
আইবাস++ ও সরকারি নিউজের আপডেট জানতে আমাদের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন।
সরকারি চাকরির সুবিধা ও সীমাবদ্ধতা কি কি ?
সুবিধাসমূহ
- নিয়মিত বেতন বৃদ্ধি পায়।
- চাকরির নিশ্চয়তা রয়েছে।
- পেনশন সুবিধা রয়েছে।
- স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসা সুবিধা প্রদান করা হয়।
সীমাবদ্ধতাসমূহ কি কি ?
- পদোন্নতি পাওয়া তুলনামূলক সময়সাপেক্ষ ব্যাপার ।
- বেসরকারি চাকরির তুলনায় কিছু ক্ষেত্রে কম বেতন পেয়ে থাকে।
- বদলির ঝামেলা থাকে ।
উপসংহার
সরকারি চাকরির ১৪তম গ্রেডে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারীরা মূল বেতনের পাশাপাশি বিভিন্ন ভাতাদি ও সরকারি নির্ধারিত সুবিধা পেয়ে থাকেন। যদিও এই গ্রেডের বেতন তুলনামূলকভাবে মাঝারি স্তরের, তবে অন্যান্য সুবিধা এবং চাকরির স্থায়িত্ব ও পদোন্নতির সুযোগ রয়েছে। যারা সরকারি চাকরিতে আগ্রহী, তাদের জন্য ১৪তম গ্রেডের চাকরিগুলো একটি ভালো সুযোগ হতে পারে।
FAQs (প্রশ্নোত্তর)
হ্যাঁ, ১৪তম গ্রেডের চাকরিতে বাড়ি ভাড়া ভাতা, চিকিৎসা ভাতা, যাতায়াত ভাতা, উৎসব বোনাস, পেনশন সুবিধাসহ অন্যান্য সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়।
পদোন্নতির সুযোগ রয়েছে। তবে নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করতে হয়।
সরকারি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আবেদন গ্রহণ করা হয় এবং লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উর্তীণ হলে নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে।
হ্যাঁ, সরকার বেতন কাঠামো পর্যালোচনা করে নির্দিষ্ট সময় পরপর নতুন স্কেল চালু করতে পারে, আবার পদোন্নতি এবং উচ্চতর গ্রেড পেয়ে থাকে।।
নতুন নিয়োগে অনলাইনে বেতন নির্ধারণের প্রদ্ধতি।
আমি বাংলাদেশ সরকারের অডিট এন্ড একাউন্টস বিভাগের একজন কর্মচারি। প্রায় এক যুগের বেশি সময় ধরে কর্মরত থাকায় বিভিন্ন অভিজ্ঞতা শেয়ার করে থাকি। তারপরও যে কোন ভুল ত্রুটি হলে তা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কোন পরামর্শ থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। ধন্যবাদ।