ডায়াবেটিস কি ? ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায় বা ডায়াবেটিস কমানোর উপায় ?
ডায়াবেটিস কি ?
ডায়াবেটিস কি : মানব দেহে যখন ইনসুলিন এর পরিমাণ কম উৎপাদন হলে শরীরে গ্লুকোজ এর পরিমাণ বেশি থাকে, এটিকেই ডায়াবেটিস বলা হয়।
বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীতে প্রতি ৭ সেকেন্ডে একজন লোক ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান (নিপোর্ট)-এর ১টি জরিপে জানা গেছে, বাংলাদেশে সর্বমোট ডায়াবেটিস আক্রান্ত মানুষের পরিমান এক কোটি ১০ লাখ। এদের মধ্যে ১৮ হতে ৩৪ বছর বয়সীদের পরিমান ২৬ লাখ আর ৩৫ বর্ষের অধিক বয়সীদের সংখ্যা ৮৪ লাখ।
গুগল নিউজ হতে আপডেট ” নিউজ হতে আইবাস++ ও সরকারি নিউজের আপডেট সংগ্রহ করে নিতে পারেন।
২০৪৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা হবে প্রায় ১.৫ কোটি।
গোটা পৃথিবীতে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস তার সাথে অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রার কারণে এ সমস্যা লক্ষ্য দেয়। অনেকক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের মাধ্যমে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি এড়ানো যায়। আবার প্রচুর সময় অনিচ্ছাকৃত খাদ্যাভ্যাসের ভুলও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
লাইফস্টাইল পরিবর্তন করে এবং খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন করে ডায়াবেটিস ঝুঁকি অনেকটা কমানো যায়।
আরও জানুনঃ কোলেস্টেরল কমাতে ডিম ? রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল প্রভাব কমায় ডিম ?
টাইপ ১ এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিস কি ?
ডায়াবেটিস প্রধানত দুই প্রকার :
- টাইপ-ওয়ান
- টাইপ ২ ডায়াবেটিস
বাংলাদেশে ৯৫ শতাংশ রোগী টাইপ-২ ধরনের।
”টাইপ-ওয়ান হচ্ছে যাদের শরীরে একেবারেই ইনসুলিন সৃষ্টি হয় না। তাদের ইনসুলিন বা পুরোপুরি ওষুধের উপর নির্ভর করার জন্য হয়। সেজন্য সবসময় চিকিৎসকের উপদেশে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।”
আগাম সাবধানতা অবলম্বন করে রাখলে টাইপ-২ ধরনের ক্ষেত্রে ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা যায়।
আরও জানুনঃ ইউরিক অ্যাসিড বেশী থাকলে আমে খাওয়ার অপকারিতা কি ? আম খেলে কি ইউরিক এসিড বেশি হয় ?
দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায় বা ডায়াবেটিস কমানোর উপায় ?
ডেইলি এক ঘণ্টা হাঁটুন
ড. আজাদ খান বলছেন, জীবনে আমাদের শারীরিক পরিশ্রম তার সাথে হাঁটার ঝোক অনেক গেছে। কম্পিউটার বা মোবাইলে কাজ করতে আমরা অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি। কিন্তু যাদের পিতা-মাতা বা পরিবারের মেম্বারদের ডায়াবেটিস আছে, তাদের জেনেটিক্যালি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ফলে তারা যদি আক্রান্ত হওয়ার প্রথমে থেকেই নিয়মিত হাঁটাচলা ও শারীরিক খাটনি করার জন্য চালু করেন, তাহলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়া হতে নিজেদের রক্ষা করতে পারবেন।
তিনি বলছেন, তাই প্রতিদিন কানুন করে কমপক্ষে একঘণ্টা হাঁটতে হবে। পাশাপাশি প্রত্যহ ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। খেলাধুলা বাড়ানো যেতে পারে।
আরও জানুনঃ মধুর উপকারিতা এবং খাঁটি মধু চেনার উপায় ? মধু খাওয়ার নিয়ম ও সময় ?
জীবনধারা পাল্টে দিন
খাদ্যাভ্যাস বদলানোর মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। অতিরিক্ত মোটা বা স্থূলতা কারণেও ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা প্রচুর বেড়ে যায়।
সাধারণ মিষ্টিজাতীয় খাবার, ফাস্টফুড, কোমল পানীয়, ভারী আহার স্থূলতার ঝুঁকি পর্যাপ্ত বাড়িয়ে দেয়। ফলে শরীরের ওজনের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে, যাতে কোনভাবেই অতিরিক্ত ওজন বা মুটিয়ে যাওয়া না হয়।
বিশেষজ্ঞরা একারণে মিষ্টি, ফাস্টফুড, পোলাও, বিরিয়ানি, রেড মিটের মতো ভারী খাদ্য এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন।
প্রক্রিয়াজাত আহার ও পানীয় এড়িয়ে চলতে হবে। মসৃন শাদা আটার রুটির পরিবর্তে খেতে হবে ভুষিওয়ালা আটার রুটি। এটাই ১ম ধাপ।
আরও জানুনঃ খালি পেটে লেবু খাওয়ার উপকারিতা ? লেবু পাতার উপকারিতা ? ক্যান্সার প্রতিরোধে লেবু
যেসব মাছে ওমেগা থ্রি তেল আছে সেগুলো বেশি খেতে হবে। যথাঃ সারডিন, স্যামন তার সাথে ম্যাকেরেল।
এক বেলা পেট ভরে না খেয়ে হিসাবে নগণ্য সামান্য করে বিরতি দিয়ে খাওয়া দরকার।
এছাড়া প্রতি সপ্তাহেই নিয়মিত ওজন মাপতে হবে। দেহের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টি ও আহার শিওর করার জন্য পুষ্টিবিদের সাথে পরামর্শ করে খাবারের লিস্ট তৈরি করে সেটা ফলো করা উচিত।
ফলে একদিকে যেমন স্বাস্থ্য নির্ভুল থাকবে, তেমনি ওজনও নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
রক্তে চিনির মাত্রার উপর নজর রাখুন ?
সব ফেমেলির বাবা-মা বা দাদা-দাদী, নানা-নানীর ডায়াবেটিস হয়ে থাকে, তাদের পরবর্তী প্রজন্মের সদস্যদেরও এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অধিক থাকে।
বাংলাদেশের ডায়াবেটিক সমিতির মহাসচিব মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন বলছেন, যাদের ঝুঁকি রয়েছে, তাদের নিশ্চয়ই সালের একবার ডায়াবেটিস পরীক্ষা করতে হলে হবে।
এজন্য সবসময় ডাক্তারখানায় যেতে হবে এমন নয়। অধুনা পর্যাপ্ত ফার্মেসিতে স্বল্পমূল্যে ফাস্ট ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা যায়। সেখান ডায়াবেটিস শনাক্ত হলে নিশ্চয়ই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
যাদের শিশুর ঘনিষ্ঠ স্বজনদের ডায়াবেটিসের ইতিহাস রয়েছে, তাদেরকেও প্রতি বছর কমপক্ষে একবার করে পরীক্ষা করতে হলে হবে এবং একবার লিপিড প্রোফাইল ও রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রাও পরীক্ষা করে দেখতে হবে।
ডায়াবেটিস এর লক্ষণ বা যে সব লক্ষণ দেখলে সতর্ক হতে হবে:
- ঘনঘন প্রস্রাব হওয়া ও তৃষ্ণা লাগা
- শরীর দুর্বল লাগা’ ও ঘোর ঘোর ভাব আসা
- ক্ষুধা বেড়ে যাওয়া
- টাইমমত খাওয়া-দাওয়া না হলে রক্তের কার্বোহাইড্রেট কমে যায় হাইপো হওয়
- যদি মিষ্টি জাতীয় খাবারের আকর্ষণ বেড়ে যায়।
- কোন কারণ ছাড়াই পর্যাপ্ত ওজন যাওয়া
- শরীরে প্রহার বা কাটাছেঁড়া হলেও দীর্ঘদিনেও সেটা না সারা
- চামড়ায় শুষ্ক, খসখসে ও চুলকানি ভাব
- বিরক্তি ও মেজাজ খিটখিটে হয়ে ওঠা
- চোখে কম দেখতে আরম্ভ করা
ডায়াবেটিস প্রতিরোধে কীভাবে খাদ্যাভ্যাস সংশোধন আনবেনঃ
দই :
- আয়ুর্বেদে প্রতিদিনই দই খাওয়ার পরামর্শ দেয় হয় কারণ এটি স্বাস্থ্যকর প্রোবায়োটিক আহার সংখ্যায় বিবেচিত। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন দধি খেলে প্রদাহ কমে,ওজন বৃদ্ধি রোধ হয় তার সাথে বিপাকক্রিয়া বাড়ে।
খাওয়ার পর পরই ঘুমানো:
- অনেকেরই রাতের খাওয়ার পর পরই ঘুমানোর হ্যাবিট আছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, রাতের ভারী অন্ন লিভারকে বহু চাপে ফেলে। এর ফলে বিপাকক্রিয়া ধীরগতি হয়। যার ফলে দেহে পুষ্টির ঘাটতি এবং অন্যান্য প্রবলেম লক্ষ্য দেয়।
অতিরিক্ত খাওয়া :
- কক্ষনো ক্ষুধা না লাগলেও অথবা পেট ভরলেও অনেক মানুষ প্লেটের সব অন্ন সম্পন্ন করার তাগিত অনুভব করেন। আয়ুর্বেদিক বিশেষজ্ঞের মতে, অতিরিক্ত খেলে স্থূলতা, উচ্চ কোলেস্টেরল তার সাথে হজমের সমস্যা হয়।
ক্ষুধার্ত না হয়ে খাওয়া:
- ক্ষুধা না লাগলেও গভীর গাঢ় খাওয়ার অভ্যাসে সমস্যায় পড়তে পারেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্ষুধার্ত বোধ না করে গাঢ় প্রবল খাওযার অভ্যাস ইনসুলিন সংবেদনশীলতা অপব্যয় করতে পারে। এর ফলে ডায়াবেটিস নোটিশ দেয়।
- বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শসায় বিদ্যমান মাত্র ১৪ গ্লাইসেমিক ইনডেক্স। যা মানবদেহে ইনসুলিন তৈরিতে সাহায্য করে। গাজরে গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের হিসাব আছে মাত্র ১৬। ডায়াবেটিস রোগীর প্রতিদিনের খাবার লিস্টে ব্রকোলি রাখার জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। এতে আছে আয়রন, ফাইবার, প্রোটিন, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়ামসহ একের অধিক পুষ্টি উপাদান।
- ঝুলন্ত সবজি করোলা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী খাবার। রক্তে চিনির সংখ্যা কন্ট্রোলে নিয়মিত করোলা খেতে পারেন।
- এ ব্যপারে ডায়েট অ্যান্ড নিউট্রিশনিস্ট বিশেষজ্ঞ বলেন, ঝুলন্ত সব ধরনের সবজি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সবচেয়ে অধিক উপকারী। উদাহরণসরূপ লাউ, শসা, ঝিঙ্গা, পটল, চালকুমড়া, করোলা ইত্যাদি। এগুলো প্রতিদিনের খাদ্য লিস্টে রাখা উত্তম। এছাড়াও মাটির একটু ওপরে কিছু সবজি রয়েছে এগুলো খেলেও অনুগ্রহ রয়েছে। যেমন ক্যাপসিকাম, মটরশুঁটি, বাঁধাকপি, টমেটো, ঢেঁড়স, ব্রকোলি ইত্যাদি। এসব সবজি সপ্তাহে দুই একদিনের অধিক না রাখা ভালো। একসাথে বিদ্যমান ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য অল্পসংখ্যক রকমের শাক। যেগুলো খেলে নিয়ন্ত্রণে আসবে ডায়াবেটিস। তাছাড়া মাটির নিচের কিছু সবজি বিদ্যমান যেগুলো মাসে দুই একবার ভোজন করা যেতে পারে। উদাহরণসরূপ আলু, লতি ইত্যাদি।
- তিনি বলেন, ইদানিং অনেক মৌসুমি ফল পাওয়া যাচ্ছে। যেগুলো ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য বেশ উপকারী। রোগীদের ডায়াবেটিসের পরিস্থিতি অনুসারে এসব ফল খেতে হবে।
রিলেটেড ট্যাগঃ ডায়াবেটিস কি ?,ডায়াবেটিস এর লক্ষণ, দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায়, ডায়াবেটিস কমানোর উপায়, কি খেলে ডায়াবেটিস হবে না, ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা, ডায়াবেটিসের লক্ষণ
আমি বাংলাদেশ সরকারের অডিট এন্ড একাউন্টস বিভাগের একজন কর্মচারি। প্রায় এক যুগের বেশি সময় ধরে কর্মরত থাকায় বিভিন্ন অভিজ্ঞতা শেয়ার করে থাকি। তারপরও যে কোন ভুল ত্রুটি হলে তা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কোন পরামর্শ থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। ধন্যবাদ।