পেনশন কি ? পেনশন যোগ্য চাকুরী এবং পেনশন যোগ্য চাকরির শর্তাবলী ?
পেনশন কি?
সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশন নীতিমালা অনুযায়ী একজন সরকারি চাকরিজীবী চাকরি শেষে পেনশন বা মাসিক ভিত্তিতে একটি ভাতা পেয়ে থাকেন। এটি পেনশন নামে পরিচিত।
কোন ক্ষেত্রে পেনশনের দাবী গ্রহণ যোগ্য নয়ঃ
বাংলাদেশ সার্ভিস রুলের ২৪৮ বিধি অনুযায়ী নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে পেনশনের দাবী গ্রহণ যোগ্য নয়ঃ
(১) সীমিত সময়ের চাকরির জন্য।
(২) কোন নির্দিষ্ট কাজের জন্য নিয়োগ করা হলে এবং কাজ শেষ হলে অব্যহতি প্রদান করা হলো।
(৩) মাসিক মজুরীর ভিত্তিতে নিয়োগ করা হলে।
(৪) কোন কার্য সম্পাদনের জন্য পারিশ্রমিক প্রাপ্তির শর্তে অস্থায়ীভাবে নিয়োগ করা হলে ( চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ)।
( ৫) পেনশন প্রদানের শর্ত নাই এমন চাকরিতে নিয়োগ করা হলে। { বিএসআর-২৪৮}
পেনশন যোগ্য চাকুরী ও পেনশন যোগ্য চাকরির শর্তাবলীঃ
(১) চাকরি সরকারি হতে হবে।
(২) স্থায়ী হতে হবে। স্থায়ী চাকরি পেনশনযোগ্য, অস্থায়ী হলে ধারাবাহিক হতে হবে।
(৩) সরকারি খাত হতে বেতন হবে।
(৪) অস্থায়ী চাকরি স্থায়ী হলে পেনশনযোগ্য হবে।
(৫) শিক্ষানবিশ চাকরির অর্ধেক পেনশনযোগ্য হবে।
(৬) প্রবেশনার চাকরি স্থায়ী স্বাপেক্ষে পেনশনযোগ্য হবে।
[বিএসআএ ২৫৮]
সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশন নীতিমালা এবং পেনশন প্রাপ্তির যোগ্যতা ও নিয়মাবলী ?
সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশন কর্মচারীর আচরণ কেমন হবে ?
- সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশন নীতিমালা অনুযায়ী ভবিষ্যৎ সৎ আচরণ পেনশন মঞ্জুরির একটি অপরিহার্য শর্ত। কোনো পেনশনার গুরুতর অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে বা অসদাচরণের কারণে শাস্তি পেলে, সরকার তাঁর পেনশন সম্পূর্ণ বা আংশিক স্থগিত বা বাতিল করতে পারে। লিখিত বা মৌখিকভাবে ব্যাখ্যা প্রদানের সুযোগ না দিয়ে এই শাস্তি কার্যকর করা যাবে না। (বি এস আর-২৪৬)।
চাকরি থেকে বরখাস্ত ও অপসারণ হলে পেনশন প্রাপ্য হবে কি ?
- কোনো কর্মচারী অসদাচরণ, অদক্ষতা বা দেউলিয়া হওয়ার কারণে চাকরি থেকে বরখাস্ত বা অপসারিত হলে, তিনি পেনশন পাবেন প্রাপ্য হবে না। বিশেষ ক্ষেত্রে অনুকম্পা ভাতা পাওয়া যেতে পারে, তবেএটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে থাকবে। (বি এস আর-২৪৯)
একই পদে দুইটি পেনশন প্রাপ্য হবে কি ?
- কোনো কর্মচারী একই পদে থেকে একাধিক পেনশন পাওয়ার দাবি করতে পারবেন না এবং একই পদে একাধিক কর্মচারীর চাকরির মেয়াদ পেনশন হিসাবের জন্য গণ্য করা যাবে না। (বি এস আর-২৫১)
. পেনশনযোগ্য চাকরির শর্তাবলী কি কি ২০২৪ এবং কোন কোন চাকরিকাল পেনশন যোগ্য ?
- কর্মচারীর বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার পর থেকে চাকরি পেনশনযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবে। (স্মারক নং MF(ID) 1-2/77/856, তারিখ: ২০ ডিসেম্বর, ১৯৭৭)
- বরখাস্তকালে পুনর্বহাল বা বাধ্যতামূলক অবসর হলে সাময়িকভাবে বরখাস্তকাল পেনশনযোগ্য চাকরির অন্তর্ভুক্ত হবে। (বি এস আর-২৯৮)
- আপিল বা রিভিশনে চাকরি হতে বরখাস্তের বা অপসারণের আদেশ পরিবর্তনকারী কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর পূর্বের চাকরি পেনশনের জন্য গণনার আদেশ দিতে পারেন। বি এস আর-৩০১
- পেনশন মঞ্জুরকারী কর্তৃপক্ষ ছুটিবিহীন অনুপস্থিতকালকে ভূতাপেক্ষিকভাবে ভাতাদি বিহীন ছুটিতে রূপান্তর করতে পারবেন। বি এস আর-৩০৩
- চাকরির মেয়াদের দীর্ঘতার উপর পেনশন নির্ধারণের সময় বছরের ভগ্নাংশ হিসাবে আনা হবে না। বি এস আর-৩৪৫
- বৎসরের ভগ্নাংশ পেনশনের জন্য গণনাযোগ্য না হইলেও পেনশনযোগ্য চাকরিকাল পূর্ণ হওয়ার পর আরো অতিরিক্ত একটি বৎসর পূর্ণ হওয়ার জন্য ছয় মাস অথবা উহারও কম সময় ঘাটতি থাকিলে, উক্ত ঘাটতিকাল প্রমার্জিত হিসাবে গণ্য হইবে। (No. F/IU-18/68-1, তারিখ: ২৭ ডিসেম্বর, ১৯৬৯)
- অসাধারণ ছুটিকাল ব্যতীত অন্যান্য ছুটিকাল পেনশনযোগ্য চাকরি হিসাবে গণ্য হবে। বি এস আর-২৯২
- যে চাকরির জন্য স্থানীয়, স্বায়ত্ত্বশাসিত সংস্থা, ট্রাস্ট, ফান্ড এবং জাতীয়করণকৃত সংস্থা হইতে বেতন দেওয়া হয় অথবা যে চাকরির বেতন কমিশন বা ফি হইতে প্রদান করা হয়, উক্ত চাকরি পেনশনযোগ্য চাকরি হিসাবে গণ্য হবে না। বি এস আর-২৮১, ১১।
- অক্ষমতাজনিত মেডিকেল সার্টিফিকেট দাখিল করার পরবর্তী সময়ের চাকরি যথাযথ কর্তৃপক্ষের বিশেষ আদেশ ব্যতিরেকে পেনশনযোগ্য চাকরি হিসাবে গণ্য হবে না। বি এস আর-৩৩৪ ১২।
- কোনো স্থায়ী পদে শিক্ষানবিস থাকিলে এবং শিক্ষানবিসকাল শেষে উক্ত পদে স্থায়ী হওয়ার জন্য উক্ত পদটি সংরক্ষিত থাকিলে, সংশ্লিষ্ট কর্মচারী যদি শিক্ষানবিসকাল শেষে চাকরিতে স্থায়ী হয়, তাহা হলে এই শিক্ষানবিসকালের চাকরি পেনশনযোগ্য চাকরি হিসাবে গণ্য হইবে। বি এস আর-২৬৯
- পেনশনের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষ অবশ্যই ইহা স্মরণ রাখবেন যে, পেনশন প্রদানে বিলম্ব পেনশনভোগীকে আর্থিক সংকটে ফেলে। পেনশন প্রদেয় হওয়ার তারিখেই পেনশন প্রদান নিশ্চিত করা অপরিহার্য। বি এস আর-৪৩০
- পেনশনারেরমৃত্যুর এক বৎসরের মধ্যে আবেদন করা হলে বকেয়া পেনশনের অর্থ তাঁহার আইনসংগত উত্তরাধিকারীকে প্রদান করা যাবে। এক বৎসরের মধ্যে আবেদন না করিলে পেনশন মঞ্জুরকারী কর্তৃপক্ষের মঞ্জুরি ব্যতিরেকে তাহা প্রদান করা যাবে না। বি এস আর-৪৮৪
- সরকার কর্তৃক নিয়োগকৃত না হলে এবং বেতন ও কর্ম সরকার কর্তৃক বা সরকারের আরোপিত শর্তাধীনে নিয়ন্ত্রিত না হলে পেনশন প্রদেয় হবে না। বি এস আর-২৬০
- স্থায়ী সংস্থাপনে স্থায়ীভাবে অধিষ্ঠিত না হলে পেনশন প্রাপ্য নয়। তবে অস্থায়ী সংস্থাপনের চাকরিকাল একনাগাড়ে পাঁচ বৎসরের অধিক হলে তাহা পেনশন ও আনুতোষিক প্রাপ্তির ক্ষেত্রে গণনাযোগ্য হবে। ইহা ছাড়া অস্থায়ী চাকরি স্থায়ী হলে উক্ত অস্থায়ী চাকরি পেনশনের জন্য গণনাযোগ্য হবে। বি এস আর-২৬৪ ও ২৬৭এ
- দেশের বাহিরে প্রেষণে নিযুক্ত হলে প্রেষণকাল পেনশনযোগ্য চাকরি হিসাবে গণ্য হবে। বি এস আর-২৯৫
- সমগ্র চাকরিকাল সন্তোষজনক না হলে পেনশন অনুমোদনের যথাযথ কর্তৃপক্ষ যেই পরিমাণ যুক্তিযুক্ত বলিয়া মনে করবেন, সেই পরিমাণ হ্রাসকৃত হারে পেনশন প্রদান করবেন। বি এস আর-৩৪৮(বি)
- পুনঃনিয়োগ সম্পর্কীত বিধানের শর্ত সাপেক্ষে পেনশন প্রাপ্য হবে। বি এসআর-২৪২
- বাংলাদেশের বাহিরে ছুটি ভোগরত কর্মচারীকে অনুমোদিত ছুটি শেষ হওয়ার পূর্বেই ফেরত আসিয়া কর্মে যোগদান করার বাধ্যতামূলক নির্দেশ দেওয়া হলে ভ্রমণে ব্যয়িত সময় পেনশনের জন্য গণনা করা হবে। বি এস আর-২৯৬
পেনশন বিলম্বে মঞ্জুর হলে
পেনশন মঞ্জুরিতে কোনো বিলম্ব হলে তা পেনশনারের আর্থিক অসুবিধার কারণ হতে পারে। তাই পেনশন মঞ্জুরির সময় সঠিকভাবে তা প্রদান নিশ্চিত করা প্রয়োজন। (বি এস আর-৪৩০)।
সর্বনিম্ন কত বছর চাকরি করেলে পেনশন প্রাপ্য হবে ?
- বর্তমানে ৫ বছর পূর্ণ হলে চাকরির সময় পেনশনযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবে,
- যা আগে ১০-২৫ বছরের মধ্যে ছিল। (প্রজ্ঞাপন নং: ০৭.০০.০০০০.১৭১.১৩.০০৬.১৫.৮১)তারিখ: ১৪-১০-২০১৫ খ্রিস্টাব্দ
- টেবিল অনুযায়ী নিম্নলিখিত হারে পেনশন প্রাপ্য হবেন।
কত ভাগ পেনশনের বাধ্যতামূলক সমর্পণ ?
অবসরগ্রহণের সময় কর্মচারীকে তাঁর মোট পেনশনের ৫০% বাধ্যতামূলকভাবে সমর্পণ করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী আনুতোষিক প্রদান করা হবে। (স্মারক নং MFP(FD)/Regn-1/3p-22/82/147)
বিস্তারিত জেনে নিন।
পেনশন কত প্রকার ও কি কি? পারিবারিক পেনশন কি জেনে নিতে পারেন।
আমি বাংলাদেশ সরকারের অডিট এন্ড একাউন্টস বিভাগের একজন কর্মচারি। প্রায় এক যুগের বেশি সময় ধরে কর্মরত থাকায় বিভিন্ন অভিজ্ঞতা শেয়ার করে থাকি। তারপরও যে কোন ভুল ত্রুটি হলে তা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কোন পরামর্শ থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। ধন্যবাদ।