কিডনী কি ? কিডনির নরমাল সাইজ কত এবং ওজন কত ? কিডনীর কাজ কি কি ?
কিডনী কি ?
মানুষের অতি প্রয়োজনীয় অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মধ্যে কিডনী একটি । হৃৎপিন্ড, ফুসফুস ও মস্তিষ্কের পরই এর স্থান । যেমন: হৃৎপিন্ড বন্ধ হলে ২ মিনিটের মধ্যে মানুষের মৃত্যু হতে পারে । ঠিক তেমনি কিডনীকে বাদ দিলে ৪৮ থেকে ৭২ ঘন্টার মধ্যে জীবন প্রদীপ নিভে যেতে পারে । রক্তের জমে যাওয়া আবর্জনাকে পরিষ্কার করাই কিডনীর কাজ । আর এ কাজ কিডনী ছাড়া অন্য কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দিয়ে সম্ভব নয় ।
কিডনীর গঠন ও কার্যপ্রণালী ?
গুগল নিউজ হতে আপডেট ” নিউজ হতে আইবাস++ ও সরকারি নিউজের আপডেট সংগ্রহ করে নিতে পারেন।
কিডনির নরমাল সাইজ কত এবং ওজন কত ?
মানবদেহে মোট ২টি কিডনী থাকে যা আকৃতিতে অনেকটা সীমের বিচির মতো । পূর্ণ বয়সে প্রতিটি কিডনী ৯ থেকে ১৩ সে.মি. লম্বা, ৫ থেকে ৬ সে.মি. প্রস্থ, মোটা ৩ সে.মি হয় । কিডনির ওজন প্রায় ১৫০ গ্রাম ।
বৃক্ক কোথায় থাকে বা কিডনীর অবস্থান ও আকৃতি ?
শরীরে নাভী বরাবর পিছনের দিকে মেরুদন্ডের দুই পাশে কিডনী অবস্থান করে । বামদিকের কিডনী ডানদিকের কিডনীর চেয়ে প্রায় ১ সে.মি. বড় থাকে এবং বাম দিকের কিডনী ডান দিকের চেয়ে কিছুটা উপরে অবস্থান করে ।
মুত্রনালি কি?
শরীরে দুটো কিডনীর মোট আয়তনের বেশীর ভাগই পাতলা পর্দা দিয়ে ঢাকা থাকে এবং উপরিভাগে টুপির মতো তৈরী ২টা গ্ল্যান্ড দিয়ে ঢাকা থাকে, যাদেরকে ‘সুপরারেনাল গ্ল্যান্ড’ বলা হয়। প্রতিটি কিডনীর মাঝে একটা গর্তের মতো থাকে যেখান থেকে ২টি সরু রক্তবাহী নল নেমে গিয়ে পেটের সবচেয়ে বড় রক্তবাহী নলে গিয়ে মিশেছে । এর একটা দিয়ে বিশুদ্ধ রক্ত প্রবাহিত হয় ও অন্যটি দিয়ে দূষিত রক্ত বের হয় । এ দুটো রক্তবাহী নলের পাশ দিয়ে আরো একটি নল বের হয়ে মূত্রথলিতে গিয়ে মিশেছে। এই নলটিকেই বলা হয় “ইউরেটার’ বা ‘মূত্রণালী’ ।
মূত্রথলির ধারণ ক্ষমতা কত ?
কিডনীতে প্রস্রাব তৈরী হয়ে এই নল দিয়ে জমা হয় মূত্রথলিতে এবং এক সময় প্রস্রাবের বেগ অনুসারে প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে তা বের হয় । মূত্রণালীর দৈর্ঘ্য প্রায় ২৫ থেকে ৩০ সে.মি. এবং এর মাঝখানে যে ছিদ্র আছে তাতে অনায়াসে ১ সে.মি. পরিমাপের পাথর আটকে যেতে পারে । মূত্রথলিতে প্রায় আধা লিটারের কিছু কম প্রস্রাব জমা থাকতে পারে এবং ২৫০ থেকে ৩০০ সি.সি পর্যন্ত প্রস্রাব জমা হলেই আমরা প্রস্রাবের বেগ অনুভব করি
কিডনীর কাজ কি কি ?
কিডনীর কাজ কি কি :
সাধারণত: কিডনীর কাজকে ৪ ভাগে ভাগ করা যায়- ১. মানুষের শরীরের ভিতর রক্তের মধ্যে জমে থাকা দুষিত পদার্থ, আবর্জনাকে প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বের করে দেয়া ।
২. রক্তের পিএইচ (PH), এসিডিটি, লবন ক্ষার ও পটাশিয়ামের মাঝে সমস্বর সাধন করা।
৩. রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণ করা ।
৪. হরমোন তৈরীতে সাহায্য করা, যা রক্ত তৈরীর জন্য প্রয়োজন ।
আরও জানুনঃ আপেল সিডার ভিনেগার ? আপেল সিডার ভিনেগার এর উপকারিতা ? ডায়াবেটিসে আপেল সিডার ভিনেগার ?
কিডনি কিভাবে রক্ত পরিশোধন করে ?
দুটো কিডনীতে প্রায় ২০-৩০ লাখ এর মতো ছাকনি রয়েছে । এই ছাকনিগুলো এতই সুক্ষ যে অণুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া দেখা যায় না । কিডনীর রক্তবাহী নল যেখানে শেষ হয়েছে ঠিক সেখানেই শুরু হয়েছে ছাঁকনিগুলো । প্রতি মিনিটে প্রায় ১২৫ লিটার এর কিছু বেশী রক্ত কিডনীতে প্রবাহিত হয় এবং প্রতি ২৪ ঘন্টায় ১৭০ লিটার এর মতো রক্ত এইভাবে ছাঁকনি দ্বারা পরিশোধিত হয় । এই পরিশোধিত রক্তের ১ থেকে ৩ লিটার ছাড়া বাকি সবটুকুই আবার শরীরে ফিরে আসে, এবং ১ থেকে ৩ লিটার প্রস্রাব তৈরী হয়ে বের হয়ে যায় ।
ছাঁকনি দ্বারা রক্তের লোহিত কণিকা, শ্বেতকণিকা, অনুচক্রিকা কিছুই বের হতে পারে না । এমনকি রক্তের যে সব উপাদানের আনবিক ওজন ৬৯০০০ এর বেশী তা ছাঁকনিতে আটকে যায় । অপ্রয়োজনীয় জিনিস যা শরীরের কোন প্রয়োজনে আসে না, যেমন রক্তের ইউরিয়া, ক্রিয়েটিনিন এবং এর সঙ্গে আরো নাম না জানা জৈব-অজৈব পদার্থ এমনকি অতিরিক্ত সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্লোরাইড, বাইকার্বোনেট বের হয়ে আসে । আর এসব মিলেই তৈরী হয় প্রস্রাব । প্রস্রাবের রং হয় সাধারণত: পানির মতো কিন্তু যখন এসিডিটি বেশী থাকে তখন হয় হলদে ধরনের । কোন কারণে ছাঁকনি দ্বারা লোহিত কণিকা বের হয়ে গেলে রং হয় লালচে । অনেক সময় নানা রকমের ওষুধ বা ভিটামিন খাওয়ার জন্য প্রস্রাবের রংয়ের পরিবর্তন হতে পারে ।
মনে রাখতে হবে, আমরা যে পানি পান করি এই পানি প্রস্রাবে রূপান্তরিত হয় না । বরং পানি রক্তে মিশে গিয়ে রক্তকে পরিশোধিত করে প্রস্রাবে রূপান্তরিত করে । আমরা প্রতিনিয়ত যে খাবার খাই তার মধ্যে রয়েছে নানা ধরনের খনিজ, আমিষ, শর্করা স্নেহ ভিটামিন, লবন, ক্ষার ও পটাশিয়ামের মিশ্রণ । এগুলো রক্তে মিশে প্রয়োজনের অতিরিক্ত লবন, ক্ষার এবং পটাশিয়াম কিডনীর ছাকনিকে ভেদ করে বের হয়ে আসে । লক্ষ লক্ষ ছাকনির সঙ্গে যুক্ত রয়েছে লক্ষ লক্ষ ‘U’ আকারের টিউব । এই টিউবের প্রতিটি অংশের প্রধান কাজই হচ্ছে শরীরের পিএইচ, লবন, ক্ষার ও পটাশিয়ামের সমতা রক্ষা করা । আর কিডনী প্রতিনিয়ত এসব গুরুত্বপূর্ণ কাজই করে যাচ্ছে ।
এছাড়াও যদি কোন কারণবশত: শরীরের রক্তচাপ অত্যধিক কমে যায়, রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রনে রাখার জন্য সাধ্যমতো চেষ্টা করে ।
আমরা জানি হঠাৎ করে যদি অত্যধিক পাতলা পায়খানা, বমি এবং রক্তক্ষরণ হয় তাহলে শরীরের জলীয় অংশ বের হয়ে যায় । ফলে রক্তচাপ কমে যায়, রক্তচাপ কমে গেলে শরীরে অত্যাবশকীয় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে রক্ত প্রবাহিত হতে পারে না ।
এজন্য সবচেয়ে বেশী ব্যাঘাত ঘটে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতায়, এর পর হৃদপিণ্ডের । এই সময়ে কিডনী তার ছাঁকনীর কাজ কমিয়ে ফেলে। এ সময় কিডনী শরীর থেকে বিভিন্ন ধরনের হরমোন রক্তে বের করে দেয় যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এই অবস্থা বেশী সময় ধরে চলতে থাকলে শরীরে রক্তের আবর্জনা জমে যেতে পারে । রক্তচাপ বেশী কমে গেলে কিডনীও রক্ত থেকে খাবার আহরণে ব্যর্থ হয় । পরবর্তী পর্যায়ে কিডনীর যথেষ্ট ক্ষতি হতে পারে। ঠিক তেমনি রক্তচাপ অতিরিক্ত বেড়ে গেলে কিডনীর উপর অতিরিক্ত চাপ পড়তে পারে এবং কিডনীর কার্যক্রমের ক্ষতি হতে পারে । এছাড়াও কিডনী তার শরীর থেকে বিভিন্ন ধরনের হরমোন তৈরী করে থাকে যা মানদেহের রক্ত তৈরীতে সাহায্য করে । এমনকি শরীরের অস্থি গঠনেও কিডনী যথেষ্ঠ সাহায্য করে থাকে ।
কিডনি কত লিটার রক্ত পরিশোধন করে ?
কিডনী প্রায় ১৮০ লিটার রক্ত পরিশোধন করে প্রতিদিন।
রিলেটেড ট্যাগঃ কিডনীর কাজ কি কি
আমি বাংলাদেশ সরকারের অডিট এন্ড একাউন্টস বিভাগের একজন কর্মচারি। প্রায় এক যুগের বেশি সময় ধরে কর্মরত থাকায় বিভিন্ন অভিজ্ঞতা শেয়ার করে থাকি। তারপরও যে কোন ভুল ত্রুটি হলে তা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কোন পরামর্শ থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। ধন্যবাদ।