পে স্কেল কি ? নবম পে স্কেল ২০২৪ সর্বশেষ অবস্থা জেনে নিন ?
পে স্কেল কি ?
পে স্কেল কি : পে স্কেল (Pay Scale) হল একটি কাঠামো বা ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে নির্দিষ্ট চাকরির ভূমিকা, দায়িত্ব এবং সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারীদের গ্রেড ভিত্তিক বেতন নির্ধারণ করা হয়।
একটি পে স্কেলে বিভিন্ন ধাপ বা গ্রেড থাকতে পারে, যেখানে প্রতিটি গ্রেডের জন্য একটি নির্দিষ্ট বেতন সীমা নির্ধারিত থাকে। সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারীরা দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং কর্মক্ষমতা অনুযায়ী তারা এই গ্রেড বা ধাপে উন্নীত হতে পারেন।
পে স্কেলের উপকারিতা:
- ন্যায্যতা: পে স্কেল কর্মক্ষেত্রে বেতনের ন্যায্যতা নিশ্চিত করে। এটি নিশ্চিত করে যে একই ধরণের কাজের জন্য সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারীরা সমান বেতন পাচ্ছেন।
- স্বচ্ছতা: পে স্কেল ব্যবস্থার মাধ্যমে সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারীরা তাদের বেতন কাঠামো সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পেতে পারেন, যা তাদের কর্মস্থানে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করে।
- প্রেরণা: সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারীরা যে তারা তাদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অনুযায়ী আরও ভালো বেতন পেতে পারেন, যা তাদের কাজের প্রতি প্রেরণা জোগায়।
- প্রতিযোগিতা: একটি সংস্থা প্রতিযোগিতামূলক বেতন কাঠামো তৈরি করে মেধাবী কর্মীদের আকর্ষণ ও ধরে রাখতে সক্ষম হয়।
আরও জানুনঃ সেনাবাহিনীর ছুটি কত প্রকার ও কি কি বা সামরিক বাহিনীর সদস্যগণ কি কি ছুটি প্রাপ্য হন ?
নবম পে স্কেল ২০২৪?
নবম পে স্কেল বা জাতীয় পে স্কেল বর্তমানে সরকারী কর্মচারীদের জন্য অত্যন্ত জরুরি হয়ে উঠেছে। পূর্ববর্তী পে স্কেলগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, প্রতিটি পে স্কেল সাধারণত ৫ বছর অন্তর অন্তর প্রণয়ন করা হয়েছে। ২০১৫ সালের পর থেকে বর্তমান অর্থ বছরের মধ্যে সাত বছর অতিবাহিত হলেও, এখনো পর্যন্ত নবম পে স্কেল জারি করা হয়নি, যার প্রধান কারণ হলো বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও সরকারের কার্যকর পরিকল্পনার অভাব।
বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী সংহতি পরিষদ নবম পে স্কেল বাস্তবায়নের জন্য সাতটি প্রধান দাবি উত্থাপন করেছে। এ দাবি গুলোর মধ্যে রয়েছে বেতন বৈষম্য দূরীকরণ এবং পে-কমিশন গঠনের মাধ্যমে নবম পে স্কেল কার্যকর করা। পাশাপাশি, পে স্কেল বাস্তবায়নের আগে ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারীদের জন্য ৫০ শতাংশ মহার্ঘ্য ভাতা প্রদান করা দাবি করা হয়েছে। যদি ডিসেম্বরের মধ্যে এই দাবিগুলো পূরণ না হয়, তাহলে আগামী ১৫ জানুয়ারী থেকে ৮টি বিভাগে ধারাবাহিকভাবে মহাসমাবেশের আয়োজন করা হবে। এছাড়া, ২৮ জানুয়ারি রাজধানীতে একটি গণকর্মচারী মহাসমাবেশের আয়োজন করার হুমকি দিয়েছে সংগঠনটি।
বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী সংহতি পরিষদের অন্যান্য দাবিসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো – ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা অনুযায়ী ১০টি ধাপে বেতন স্কেল নির্ধারণ করা। বেতন স্কেল নির্ধারণে পে-কমিশনে কর্মচারী প্রতিনিধি রাখা বাধ্যতামূলক করতে হবে। এছাড়াও, সচিবালয়ের মতো সব দপ্তর ও অধিদপ্তরের পদ ও পদবি পরিবর্তনসহ একক ও অভিন্ন নিয়োগবিধি প্রণয়ন করতে হবে। টাইম স্কেল, সিলেকশন গ্রেড, বেতন জ্যেষ্ঠতা পুনর্বহাল করতে হবে এবং বিদ্যমান গ্র্যাচ্যুইটি বা আনুতোষিকের হার ৯০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০০ শতাংশ করতে হবে। এছাড়া, পেনশন গ্র্যাচ্যুইটি ১ টাকার সমান ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা প্রয়োজন। আউটসোর্সিং পদ্ধতি বাতিল করে সেই পদ্ধতিতে নিয়োগ করা এবং উন্নয়ন খাতের কর্মচারীদের রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করার দাবি জানানো হয়েছে।
তারা আরও উল্লেখ করেছেন যে, বর্তমান বাজারমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সব ভাতা পুনঃনির্ধারণ করতে হবে। চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর এবং অবসরের বয়সসীমা ৬২ বছর নির্ধারণসহ সকল ব্লক পোস্টে এ কর্মরত কর্মচারীদের পদোন্নতি অথবা উচ্চতর গ্রেড প্রদান করতে হবে ১০ বছর পরপর ।
নবম পে স্কেলের সর্বশেষ অবস্থা
যদি সাত দফা দাবি পূরণ না হয়, তবে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকারি কর্মচারীরা। নবম পে স্কেল ঘোষণা, অভিন্ন নিয়োগবিধি চালু, আউটসোর্সিং পদ্ধতি বাতিল, টাইম স্কেল এবং সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহাল, বিনা সুদে ৩০ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত গৃহনির্মাণ ঋণ প্রদান, চাকরিতে প্রবেশ এবং অবসরের বয়স বাড়ানোসহ সাত দফা দাবি পূরণে আহ্বান জানানো হয়েছে।
কেন পে স্কেল জারি করা এখন জরুরি?
করোনাকাল অতিবাহিত হওয়ার পর থেকে বিশ্ব বাজারে মন্দার সৃষ্টি হয়েছে। দেশের বাজারেও পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি দেখা গেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে আমদানি-রপ্তানিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে, যার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। চলতি অর্থবছরে দেশের বাজারে মূল্যস্ফীতি ৬.১৮ শতাংশ ছাড়িয়েছে। প্রতি বছর ৫% হারে সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়ানো হলেও, মূল্যস্ফীতির হারের সঙ্গে সেটি মিলছে না। বর্তমান বছরে দ্রব্যমূল্য ৫০% পর্যন্ত বৃদ্ধি পাওয়ায়, নবম পে স্কেল জারি করা একান্ত প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।
এ বছর কি পে স্কেল জারি হবে?
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এই বছরে পে স্কেল জারি হওয়ার সম্ভাবনা কম। বাজেট পেশের পর, যেখানে মহার্ঘ ভাতার বাজেটও সংরক্ষিত হয়নি, তাতে এই বছরে মহার্ঘ ভাতা পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাছাড়া, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেতন বাড়ানো সম্ভব না হলে নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীদের অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে।
নতুন পে স্কেল কবে হবে ২০২৪ ?
নবম পে স্কেল ২০২৩ এ ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা কম। সরকারের সাম্প্রতিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং পরিস্থিতি বিবেচনা করলে, ২০২৪ সালেই নবম পে স্কেল জারি হতে পারে। ১৯৭৩ সালের পর থেকে পে স্কেলের প্রণয়ন করার ধারা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ২০২০ সালেই পে স্কেল ঘোষণা করা উচিত ছিল, কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারি এবং অন্যান্য বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে তা সম্ভব হয়নি।
আরও জানুনঃ জিপিএফ এর নমিনি পরিবর্তন করার নিয়ম ২০২৪ ?
নবম পে স্কেল বেতন কাঠামো-২০২৪ ?
সরকারি কর্মচারীগণ জাতীয় পে স্কেল মোতাবেক বার্ষিক প্রায় ৫% হারে ইনক্রিমেন্ট পেয়ে থাকে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি এবং দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধির সঙ্গে বেতন বৃদ্ধির সমন্বয় হচ্ছে না। ৬ বছরে ৩০% বেতন বৃদ্ধি হলেও, মূল্যস্ফীতি ৫০-৬০% পর্যন্ত বেড়েছে। তাই বর্তমান অবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নতুন পে কমিশন গঠন করে নবম পে স্কেল ঘোষণা করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।
উপসংহার
সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য মহার্ঘ ভাতা এবং বেতন ভাতা বাড়ানো অত্যন্ত প্রয়োজন, যাতে তারা বর্তমান বাজারমূল্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে এবং তাদের জীবনযাত্রার মান বজায় রাখতে পারে। একই সঙ্গে, সাধারণ জনগণের জন্য দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিও নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি, যাতে তাদের জীবনযাত্রায় কোন ধকল না পড়ে।
আইবাস++ ও সরকারি নিউজের আপডেট জানতে আমাদের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন।
আমি বাংলাদেশ সরকারের অডিট এন্ড একাউন্টস বিভাগের একজন কর্মচারি। প্রায় এক যুগের বেশি সময় ধরে কর্মরত থাকায় বিভিন্ন অভিজ্ঞতা শেয়ার করে থাকি। তারপরও যে কোন ভুল ত্রুটি হলে তা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কোন পরামর্শ থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। ধন্যবাদ।