nocomments

সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালা, ২০২৩ এবং সর্বজনীন পেনশন স্কিম এর মাসিক চাঁদা পরিশোধের নিয়মাবলী ?

সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালা, ২০২৩ ?

রাষ্ট্রের প্রাপ্তবয়স্ক জনগণকে পেনশনের আওতায় আনার টার্গেটে সর্বজনীন পেনশন বিধিমালা জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। গতকাল সোমবার জারি করা বিধিমালা অনুসারে ১৮ বছর বা তার অধিক বয়সী নাগরিকরা চারটি স্কিমের সাহায্যে এতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। এসব স্কিমে জয়েন হয়ে সারাজীবন পেনশন অ্যাডভান্টেজ পেতে ন্যূনতম ১০ বছর নিরবচ্ছিন্নভাবে সুনির্দিষ্ট হারে চাঁদা প্রদান করতে হবে। পরপর তিন মাস চাঁদা দিতে প্রদান না করলে হিসাবটি বন্ধ হয়ে যাবে। উক্ত হিসাবের জরিমানাসহ সকল বকেয়া কিস্তি পরিশোধ হিসাবটি পুনরায় চালু হবে।

গুগল নিউজ হতে আপডেট ” নিউজ হতে আইবাস++ ও সরকারি নিউজের আপডেট সংগ্রহ করে নিতে পারেন।


১৭ আগস্ট বৃহস্পতিবার সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে সংযুক্ত থাকবে গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট, রংপুর জেলা ও সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাস। এর পরই বিধিমালা কার্যকর হবে। এ কর্মসূচির আওতায় প্রবাসীদের জন্য ‘প্রবাস’, বেসরকারি কর্মচারীদের জন্য ‘প্রগতি’, স্বকর্মে নিয়োজিত (অনানুষ্ঠানিক খাত) ব্যক্তিদের জন্য ‘সুরক্ষা’ তার সাথে অতিদরিদ্রদের জন্য ‘সমতা’– এ চারটি স্কিমের কথা উল্লেখ আছে বিধিমালায়।
এসব স্কিমে যুক্ত হয়ে বেসরকারি খাতের ওয়ার্রকার বা প্রবাসীরা তাদের সর্বমোট চাঁদার চেয়ে সর্বনিম্ন ২ দশমিক ৩০ গুণ হতে মেক্সিমাম ১২ দশমিক ৩১ গুণ অর্থ পেনশন হিসেবে পাবেন।

সর্বজনীন পেনশন স্কিম এর মাসিক চাঁদার পরিমাণ কত হবে ?

বেসরকারি শ্রমিকরা বা কর্মচারিরা মাসিক দুই হাজার, তিন হাজার ও পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা দিয়ে প্রগতি স্কিমে জয়েন হতে পারবেন। প্রবাস স্কিমে মাসিক চাঁদা ধরা হয়েছে ৫ হাজার, সাড়ে ৭ হাজার তার সাথে ১০ হাজার টাকা। সুরক্ষা স্কিমে কৃষক, রিকশাচালক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতিসহ সব ধরনের অনানুষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত ব্যক্তিরা এক হাজার, দুই হাজার, তিন হাজার ও পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা দিয়ে অধিভুক্ত হতে পারবেন। সমতা স্কিমে চাঁদা মাসের মধ্যে ১০০০/- হাজার টাকা। এর ভিতরে গ্রাহক প্রতি মাসের মধ্যে ৫০০ টাকা করে দেবেন। বাকি ৫০০ টাকা সরকারের পক্ষ হতে পরিশোধ করবে।

আরও জানুনঃ পেনশন ইএফটি কি ? ইএএফটি রিটার্ন কী ?  ইএফটি রিটার্ন হলে করণীয় ? পেনশনার মারা গেলে করণীয় ?

সর্বজনীন পেনশন স্কিম এর মাসিক চাঁদা পরিশোধের নিয়মাবলী ?

• যে কোনো সর্বজনীন পেনশন স্কিম রেজিস্ট্রেশন করলে কর্তৃক উক্ত স্কিমের জন্য নির্ধারিত হারে নিয়মিত মাসিক চাঁদা প্রদান করতে হবে।
• নিবন্ধনের পর আবেদনকারী বিধি ৪ এর উপ-বিধি (৫) এ তারিখের ভিতরে মোবাইল ফোন ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস, Online banking, credit card বা debit card এর সাহায্যে বা তফসিলি ব্যাংকের কোনো শাখায় Over the Counter নিয়মে কর্তৃপক্ষের নির্দিষ্ট ব্যাংক হিসাবে প্রত্যেক মাসের চাঁদা জমা করতে হবে।
• প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকগণ credit card বা debit card এর সাহায্যে বৈধ চ্যানেলে বৈদেশিক মুদ্রায় মাসিক চাঁদার টাকা কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ব্যাংক সংখ্যায় জমা করবেন।
• নির্ধারিত তারিখের মধ্যে চাঁদা জমা করিতে ব্যর্থ হইলে পরবর্তী এক মাস পর্যন্ত জরিমানা ছাড়া চাঁদা প্রদান করা যাবে এবং এক মাস অতিবাহিত হলে পরের প্রতি দিনের জন্য ১% হারে লেট ফি জমা প্রদান সাপেক্ষে হিসাবটি সচল রাখা যাবে।

আরও জানুনঃ অনলাইনে বয়স্ক, বিধবা ভাতা এবং প্রতিবন্ধী ভাতার আবেদন করা ২০২৩ সালের নতুন নির্দেশনা ?


• কোনো চাঁদাদাতা ধারাবাহিকভাবে ৩ (তিন) কিস্তি চাঁদা জমাদানে অসমর্থ হলে তার পেনশন হিসাবটি স্থগিত হবে এবং প্রতিদিনের জন্য উপ-বিধি (৪) অনুযায়ী সমুদয় বকেয়া কিস্তি পরিশোধ না করা পর্যন্ত হিসাবটি সচল করা হবে না।
• চাঁদাদাতাগণ মাসের নাম উল্লেখপূর্বক যে কোনো হিসাব চাঁদার টাকা অগ্রিম পরিমাণে জমা করতে পারবেন।
• কোনো ইন্সটিটিউট স্কিমে অংশগ্রহণ করলে কর্মী এবং প্রতিষ্ঠানের জন্য ধার্যকৃত মাসিক চাঁদা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ইন্সটিটিউট কর্তৃক একাধার তহবিলে জমা করতে হবে।
• সকল স্কিমের জন্য চাঁদার কিস্তি চাঁদাদাতার পছন্দ অনুযায়ী মাসিক, ত্রৈমাসিক বা বার্ষিক ভিত্তিতে পরিশোধের চান্স থাকবে।
• চাঁদার টাকা জমা হইলে চাঁদাদাতার রেজিস্টার্ড মুঠো ফোন নম্বরে তাকে অবহিত করা হবে এবং নির্ধারিত তারিখের ভিতরে চাঁদা প্রদান করা না হইলে বিলম্ব ফিসহ চাঁদা জমাদানের জন্য চাঁদাদাতার রেজিস্টার্ড মুঠো ফোন নম্বরে বার্তা প্রদান করা হবে।

আরও জানুনঃ আপেল সিডার ভিনেগার ? আপেল সিডার ভিনেগার এর উপকারিতা ? ডায়াবেটিসে আপেল সিডার ভিনেগার ?

বিধিমালায় বলা হয়, চাঁদাদাতা যৌক্তিক রিজন উল্লেখ করে কর্তৃপক্ষের অ্যাপ্রুভ সাপেক্ষে তাঁর অনুকূলে শুরু করা স্কিমের পরিবর্তে অন্য স্কিম বা স্কিমের চাঁদা দেওয়ার হার সংশোধন করার জন্য পারবেন। স্কিম রূপান্তরের ক্ষেত্রে রূপান্তরিত স্কিমে নিউ চাঁদার হিসাব পৃথক রেখে লভ্যাংশ ও পুঞ্জীভূত জমার সাথে হিসাব করার জন্য হবে, যা পূর্বতন স্কিমের পুঞ্জীভূত জমার সাথে জয়েন হবে। স্কিম রূপান্তরের কারণে মেয়াদপূর্তিতে মাসিক পেনশনের পরিমাণ পুনর্নির্ধারিত হবে।

যে সব প্রবাসীর জাতীয় পরিচয় পত্র নেই তারা কি সর্বজনীন পেনশন স্কিম এ অংশ নিতে পারবে ?

দেশের নাগরিক জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে কোনো স্কিমে অধিভুক্ত হতে পারবেন। যেসব প্রবাসীর জাতীয় পরিচয়পত্র নেই, তারা পাসপোর্টের ভিত্তিতে প্রযোজ্য স্কিমে রেজিস্টার করার জন্য পারবেন। কিন্তু সম্ভাব্য স্বল্প সময়ের ভিতরে জাতীয় পরিচয়পত্র গ্রহণ করে তার অনুলিপি পেনশন কর্তৃপক্ষের নিকট জমা দিতে হবে। একই সাথে পাসপোর্ট নবায়ন বা পুনঃইস্যুর ক্ষেত্রে নবায়ন করা বা পুনঃইস্যু করা পাসপোর্টের অনুলিপি কর্তৃপক্ষের নিকট জমা দিতে হবে।

আরও জানুনঃ গর্ভবতী মায়ের যত্ন কি কি এবং গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের সতর্কতা ? গর্ভবতী মায়ের কি কি চেকআপ করা দরকার ?

বিদ্যমান সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় থাকা ব্যক্তিরাও প্রয়োগ-যোগ্য স্কিমে অংশগ্রহণ করার জন্য পারবেন। তবে পেনশন কার্যক্রমে অংশগ্রহণের প্রথমে সোশাল নিরাপত্তা কর্মসূচির সব অ্যাডভান্টেজ সমর্পণ করতে হবে। কোনো স্কিমে নিবন্ধনের জন্য দেশে ও প্রবাসে বিদ্যমান বাংলাদেশি নাগরিকদের কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ফরম অনলাইনে পূর্ণ করে আবেদন করার জন্য হবে। আবেদনে সাথে সাথে ১টি ইউনিক আইডি নম্বর দেওয়া হবে। আবেদনে মোবাইল নম্বরে এবং অনিবাসী আবেদনকারীর ক্ষেত্রে ই-মেইলের সাহায্যে ইউনিক আইডি নম্বর, চাঁদার হার ও মাসিক চাঁদা প্রদানের তারিখ জানিয়ে দেওয়া হবে।


সোনালী ব্যাংকে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের একটি কেন্দ্রীয় অ্যাকাউন্ট থাকবে। এ ছাড়া ভিন্ন ভিন্ন স্কিমের আওতায় প্রত্যেক চাঁদাদাতার নামে একটি পৃথক পেনশন অ্যাকাউন্ট থাকবে। কর্পাস নামে এ অ্যাকাউন্টেই চাঁদাদাতার টাকা মেজারমেন্ট করা হবে। কর্তৃপক্ষ প্রতি অর্থবছর শেষে সর্বজনীন ফান্ডের নিরীক্ষিত হিসাব বিবরণী অনুযায়ী কর্পাস হিসাবের স্থিতির উপর লভ্যাংশ ঘোষণা করবে। রেভিনিউ পুনরায় কর্পাস অ্যাকাউন্টে জমা হবে। চাঁদাদাতার কর্পাস আইডিতে পুঞ্জীভূত জমার ভিত্তিতে পরিচালকবৃন্দ মাসিক পেনশন নিরূপণ করবে।

আরও জানুনঃ ই-পাসপোর্ট করার নিয়ম ? ই পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে ২০২৩ ?

নিবন্ধনের পর অংশগ্রহণকারী নির্ধারিত তারিখের ভিতরে মুঠো ফোন ব্যাংকিং, অনলাইন ব্যাংকিং, ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে বা তপশিলি ব্যাংকের কোনো শাখার মাধ্যমে কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ব্যাংক হিসাবে মাসিক চাঁদা জমা দেবেন। প্রবাসীরা ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের সাহায্যে বৈধ চ্যানেলে বৈদেশিক মুদ্রায় মাসিক চাঁদার টাকা কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ব্যাংক হিসাবে জমা দেবেন।

নির্ধারিত তারিখের ভিতরে কিস্তি পরিশোধ না করলে পরবর্তী এক মাস পর্যন্ত জরিমানা ছাড়াই জমা দেওয়া যবে। তবে এক মাস অতিবাহিত হলে পরবর্তী প্রতিদিনের জন্য ১ শতাংশ হারে জরিমানা গুনতে হবে। কিন্তু কোনো চাঁদাদাতা যদি ধারাবাহিকভাবে তিন মাস চাঁদা পরিশোধে ব্যর্থ হন, তাহলে তাঁর পেনশন হিসাবটি স্থগিত হয়ে যাবে। অতঃপর জরিমানাসহ সমস্ত বকেয়া কিস্তি পরিশোধ না করা পর্যন্ত হিসাবটি সচল করা হবে না।

চাঁদাদাতা মাসের নাম উল্লেখপূর্বক যে কোনো সংখ্যা চাঁদার টাকা অগ্রিম হিসাবে জমা দেওয়ার জন্য পারবেন। কোনো ইন্সটিটিউট স্কিমে অংগ্রহণ করলে কর্মী তার সাথে ইন্সটিটিউটের জন্য ধার্য করা মাসিক চাঁদা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠানটিকে একই পাত্র পেনশন তহবিলে জমা দিতে হবে। সব স্কিমের জন্য চাঁদার কিস্তি চাঁদাদাতার লাইক অনুযায়ী মাসিক, ত্রৈমাসিক বা বার্ষিক ভিত্তিতে পরিশোধের চান্স থাকবে।

আরও জানুনঃ ২০২৩-২৪ অর্থবছর হতে শুরু হতে যাচ্ছে ভুমি ক্রয় বিক্রয়ে ই রেজিস্ট্রেশন বা ই দলিল ? কমবে হয়রানি ?

শারীরিক ও মানসিকভাবে অসমর্থ চাঁদাদাতার ক্ষেত্রে বিধান ?

কোনো চাঁদাদাতা চাঁদা প্রদানকালে শারীরিক ও মানসিক অসামর্থ্যের কারণে স্থায়ী বা সাময়িকভাবে আংশিক বা সম্পূর্ণ কর্মহীন ও উপার্জনে অক্ষম হলে তাঁকে অসচ্ছল চাঁদাদাতা হিসেবে ঘোষণার জন্য উনি কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিতভাবে অ্যাপ্লাই করার জন্য পারবেন। অভাবের সত্যাত্য নির্ণয়ে শাসকবর্গ বিজ্ঞপ্তির সাহায্যে কেন্দ্রীয়, বিভাগ, জেলা ও থানা অবস্থায় পৃথক পৃথক মেডিকেল বোর্ড আকার করবে। এ ক্ষেত্রে আপিল বিভাগের দায়িত্বে থাকবে অর্থ বিভাগ। কোনো চাঁদাদাতা অসচ্ছল হিসেবে ঘোষিত হওয়ার পর মেক্সিমাম ১২ মাস পর্যন্ত চাঁদা পরিশোধ না করলেও তাঁর পেনশন হিসাবটি স্থগিত হবে না।

আরও জানুনঃ দেশের  ভূমি ব্যবস্থাপনায় ডিজিটাল প্রযুক্তি ? ই-নামজারি কি ? ভূমি মালিকদের আধুনিক কার্ড ?

এ ছাড়া কোনো মানসিক ভারসাম্যহীন চাঁদাদাতার নমিনি বা উত্তরাধিকার চাঁদার কিস্তি রেগুলার জমা দিয়ে স্কিমটি চালু রাখার জন্য পারবেন। মেয়াদ শেষে ওই স্কিমের অপরদিকে পেনশনের অর্থ নমিনি বা উত্তরাধিকারীরা তুলতে পারবেন। চাঁদাদাতা নিখোঁজ হওয়ার সাত বছর হলে পেনশনের প্রাপ্যতা অর্জিত হওয়া সাপেক্ষে ওনাকে নিখোঁজ পেনশনার হিসেবে পরিগনিত করে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেবে কর্তৃপক্ষ। পেনশনার তাঁর বয়স ৭৫ বছর হওয়ার পূর্বেই নিখোঁজ হলে সাত বছর পর নমিনি বা উত্তরাধিকারীদের মাসিক ভিত্তিতে পেনশন প্রদান করা হবে। যদি পেনশনভোগী ৭৫ বছরের প্রথমে মারা যান, তাহলে তাঁর নমিনি সেই বয়স (৭৫) পর্যন্ত একই হারে পেনশন পাবেন।

সর্বজনীন পেনশন আইন পাস হয় কবে?

সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা বিল ৩১শে জানুযারী ২০২৩’ সালে পাস করা হয়েছে। সর্বজনীন পেনশন আইন পাস দেশের সব প্রাপ্ত বয়স্ক নাগরিককে পেনশন স্কিমের আওতায় আনার উদ্দেশ্য নিয়ে আইনটি পাস করা হয়েছে।

রিলেটেড ট্যাগঃ সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালা,

Reply

error: Content is protected !!