কিডনীতে কি কি রোগ হতে পারে ? কিডনী রোগের উপসর্গ বা কিডনী রোগের লক্ষণ ?
পোস্ট সামারীঃ
- কিডনীতে কি কি রোগ হতে পারে ?
- কিডনীতে কি কি ধরনের রোগ হতে পারে ?
- কিডনী রোগের উপসর্গ বা কিডনী রোগের লক্ষণ ?
- শরীর বা মুখমন্ডল ফোলা ?
- কোন ধরনের কিডনী রোগীর শরীর ফুলে যায় ?
- প্রাথমিকভাবে কিডনী রোগে কোন লক্ষন বা উপসর্গ প্রকাশ পায় না ?
- শিশুদের ক্ষেত্রে কিডনী রোগের লক্ষণ ?
- প্রস্রাবের বর্ণের অস্বাভাবিকতা ?
- কিডনীতে ব্যাথা ?
গুগল নিউজ হতে আপডেট ” নিউজ হতে আইবাস++ ও সরকারি নিউজের আপডেট সংগ্রহ করে নিতে পারেন।
কিডনীতে কি কি রোগ হতে পারে ?
সচরাচর কিডনীর যে সমস্ত রোগ আমাদের নজরে পড়ে তা দু’ভাগে ভাগ করা যায়-
১. মেডিকেল সংক্রান্ত
২. শল্য সংক্রান্ত মেডিকেল সংক্রান্ত রোগ সাধারণত ঔষধে নিরাময় হয়, শল্য সংক্রান্ত রোগের জন্য অপারেশনের দরকার পড়ে ।
আরও জানুনঃ নবজাতক জন্মের পর করণীয় কি কি ? নবজাতকের নাভির যত্ন ? নবজাতকের গোসলের নিয়ম ?
কিডনীতে কি কি ধরনের রোগ হতে পারে ?
- কিডনীর ছাঁকনীরোগ বা নেফ্রাইটিস
- প্রস্রাবের ইনফেকশন
- উচ্চ রক্তচাপ ও কিডনী রোগ
- ডায়াবেটিসজনিত কিডনী রোগ
- আকস্মিক কিডনী বিকল
- ধীরগতিতে কিডনী বিকল
- ওষুধের ব্যবহারজনিত কিডনী রোগ জন্মগত ও বংশাণুক্রমিক কিডনী রোগ
- গর্ভকালীন কিডনী রোগ
- শল্য সংক্রান্ত রোগ (ইউরোলজি)
- পাথর জনিত কিডনী রোগ
- জন্মগত কিডনী বিকলাঙ্গতা
- প্রস্টেট গ্ল্যান্ডের জটিলতা
আরও জানুনঃ গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা এবং গর্ভবতী মায়ের খাবার ?
কিডনী রোগের উপসর্গ বা কিডনী রোগের লক্ষণ ?
মানুষের নানা রোগের বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই একাধিক উপসর্গ পরিলক্ষিত হয় । আবার অনেক রোগেরই সাধারণত: কোন নির্দিষ্ট উপসর্গ থাকে না। একটি রোগকে সঠিকভাবে নির্ণয় করতে কয়েকটি উপসর্গ মিলিয়ে দেখতে হয় । এরপরও রোগীকে পুংখানুপুংখরূপে পরীক্ষা করে এবং ল্যাবরেটরির আনুষাঙ্গিক পরীক্ষার ফলাফলের ভিক্তিতে রোগীর সঠিক রোগ নির্ণয় করা হয়ে থাকে । একজন দক্ষ চিকিৎসক রোগ সনাক্তকরণের উপর গুরুত্ব দিয়ে থাকেন আগে, কেননা রোগের চিকিৎসাই মূখ্য আর উপসর্গের চিকিৎসা গৌণ ।
এখানে কিডনী রোগের কি কি উপসর্গ হয়ে থাকে তার মোটামুটি বর্ণনা দেওয়া হল ।
শরীর বা মুখমন্ডল ফোলা ?
মুখমন্ডল বলতে আমরা চোখের নীচের পাতাকে বোঝাচ্ছি । কিডনী রোগের কারণে শরীরে পানি জমে গেলে সাধারণত চোখের নীচে ফুলে যায়, যা সকালে ঘুম থেকে উঠার পর নজরে বেশী পড়ে । বেশী পরিমাণ মুখমন্ডল ফুলে গেলে সকালে চোখ খুলতেও অসুবিধা হতে পারে । যেহেতু চোখের নীচের পাতা ঢিলা এবং চামড়াও পাতলা সেহেতু পানি এখানে জমা হওয়ার সুযোগ পায় বেশী ও ক্রমান্বয়ে চোখের পাতা থেকে শুরু করে ফোলাটা ছড়িয়ে পরে পায়ে ও পরবর্তীতে পেটে ।
আরও জানুনঃ গর্ভাবস্থায় বা প্রেগনেন্ট হলে নারীর শরীরের পরিবর্তন বা লক্ষণ দেখা যায় ?
কোন ধরনের কিডনী রোগীর শরীর ফুলে যায় ?
- সব ধরনের কিডনী রোগে শরীর ফুলে না, কেবলমাত্র ছাকনীতে প্রদাহ জনিত রোগ বা নেফ্রাইটিসে শরীর ফুলে যায় ।
- কিডনী ছাড়াও হৃদপিন্ড অকেজো হয়ে গেলে বা যকৃতের রোগে অনেক সময় শরীর ফুলে যায়।
- হৃদপিন্ডের কারনজনিত ফোলা সাধারণত: প্রথমে পায়ে নজরে পড়ে এবং সঙ্গে রোগীর শ্বাসকষ্টও থাকে ।
- আর যকৃত সংক্রান্ত হলে প্রথমে পানি আসে পেটে ও পায়ে, এক্ষেত্রে মুখমন্ডল কখনই ফুলে যায় না ।
- এ ছাড়াও ফাইলেরিয়া রোগের কারণে, থাইরয়েড গ্লান্ডের জটিলতার কারণে, রক্তস্বল্পতার কারণে শরীর ফুলে যেতে পারে ।
- প্রস্রাব পরীক্ষার পর প্রস্রাবে যদি বেশী পরিমাণে এ্যালবুমিন পাওয়া যায় তখন কিডনী রোগীকে আলাদা করা যায় ।
প্রাথমিকভাবে কিডনী রোগে কোন লক্ষন বা উপসর্গ প্রকাশ পায় না ?
প্রস্রাবের অস্বাভাবিকতা
সুস্থ মানুষ সাধারণত: দু’তিন ঘন্টায় একবার অথবা পানি খাবার প্রবণতা বেশী থাকলে ঘন্টায় একবার প্রস্রাব করতে পারে । মেয়েদের প্রস্রাব করার প্রবণতা ছেলেদের চেয়ে কম হয় এবং তারা সাধারণত পাঁচ ছয় ঘন্টা প্রস্রাব না করেও থাকতে পারে। হঠাৎ করে ঠান্ডা পরিবেশে, ছাত্র/ছাত্রীদের পরীক্ষার পূর্বে, অথবা যে কোন কারণে টেনশন বা নার্ভাস হলে প্রসাবের প্রবণতা এমনিতেই বেড়ে যায় ।
শিশুদের ক্ষেত্রে কিডনী রোগের লক্ষণ ?
- শিশুরা সাধারণত জীবনের প্রাথমিক পর্যায়ে ঘন ঘন প্রস্রাব করলেও বয়স বাড়ার সাথে এই প্রবণতা লোপ পেয়ে স্বাভাবিক হয়ে আসে ।
- পানি কম খেলে, শরীর অতিরিক্ত ঘেমে গেলে, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যেতে পারে ।
- প্রস্রাবে জীবাণুজনিত প্রদাহ হলে প্রস্রাব করার প্রবণতা কয়েকগুণ বেড়ে যায় অর্থাৎ ঘন্টায় পাঁচ-ছয় বার বা তারও বেশী হতে পারে ।
আরও জানুনঃ প্রিম্যাচিউর বেবি বলতে কি বুঝায় ? প্রিম্যাচিউর বাচ্চার যত্ন ? কত সপ্তাহে বাচ্চা ম্যাচিউর হয় ?
- এমনকি প্রস্রাব করে আসার সঙ্গে সঙ্গে আবারও প্রস্রাবের বেগ হতে পারে ।
- সঙ্গে প্রস্রাবে জ্বালা পোড়া এবং প্রস্রাবের রাস্তায় ব্যথাও হয়, অনেক সময় জ্বরও হতে পারে ।
- বয়স্ক পুরুষের প্রস্টেট গ্ল্যান্ড বড় হয়ে গেলে রাতে প্রস্রাব করার প্রবণতা লক্ষ করা যায় ।
- এছাড়া প্রস্রাব করতে সময় বেশী লাগে এবং অনেক সময় ফোটা ফোটা প্রস্রাব করতে দেখা যায় ।
- দুটো কিডনী অকেজো হয়ে গেলেও রাতে প্রস্রাবের বেগ হতে পারে ।
- এছাড়াও ডায়াবেটিকস বা বহুমুত্র রোগেও ঘন ঘন প্রস্রাব হয়ে থাকে ।
- ঘন ঘন পাতলা পায়খানা,
- অতিরিক্ত বমি,
- আকস্মিক কিডনী বিকল,
- একিউট নেফ্রাইটিস,
- প্রস্রাবের রাস্তায় পাথর আটকা পড়লে
- অথবা প্রস্টেট গ্ল্যান্ড বড় হওয়ার কারণে প্রস্রাব কমে যেতে যেতে এক পর্যায়ে বন্ধ হয়ে যেতে পারে ।
- শিশুদের ক্ষেত্রে জন্মগত জটিলতা বা স্নায়ুতন্ত্রের বৈকল্যের জন্য প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যেতে পারে ।
আরও জানুনঃ নরমাল ডেলিভারি হওয়ার লক্ষণ কি কি ? প্রসব ব্যথা বা ডেলিভারির ব্যথা কেমন হয় এবং শুরু হওয়ার লক্ষণ সমূহ ?
প্রস্রাবের বর্ণের অস্বাভাবিকতা
- পানি কম পান করলে অথবা শরীর অতিরিক্ত ঘেমে গেলে প্রস্রাব ঘনীভূত হয়ে হলুদ বর্ণ ধারণ করতে পারে ।
- এসব ক্ষেত্রে প্রস্রাব বের হওয়ার সময় কিছুটা জ্বালা-পোড়া হতে পারে ।
- বি-কমপ্লেক্স জাতীয় ভিটামিন এবং জন্ডিস হলে প্রস্রাবের রং হলদে হয়ে যায় ।
- আর লালচে বর্ণের প্রস্রাব হতে পারে রিফামপিসিন জাতীয় টিবির ওষুধ, অতিরিক্ত মাত্রায় লালশাক ও জাম খেলে ।
- রক্ত মিশ্রিত প্রস্রাব সেটা যে কারণেই হোক না কেন তা অবহেলা করা উচিৎ নয় ।
- এটা অতি সাধারণ কারণ থেকে শুরু করে ক্যানসারের মত মারাত্বক ব্যাধি পর্যন্ত হতে পারে ।
- শৈশব ও কৈশোরে এর কারণ ব্যাপক, বয়স্কদের ক্ষেত্রে এর কারণ জটিল এবং বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে এর কারণ বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই ভয়ংকর ।
আরও জানুনঃ গর্ভাবস্থায় টিকা দেওয়ার নিয়ম এবং গর্ভকালীন সময়ে কোন টিকা নিতে হয় ?
কিডনীতে ব্যাথা ?
পেটের ব্যাথার কারণ ব্যাপক । এটা যেমন কোন নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই হতে পারে ঠিক তেমনি বিভিন্ন জটিলতার কারণেও দেখা দিতে পারে ।
- কিডনীর ব্যাথা সাধারণত নাভীর বরাবর পিছনের দিকে হয়ে থাকে ।
- অনেক ক্ষেত্রে এই ব্যাথা ডান অথবা বাম দিকে হয়ে থাকে।
- ব্যাথা সামনের দিকে এসে দুই কুচকি বরাবর যেতে পারে এবং
- পুরুষদের অন্ডকোষ পর্যন্ত এবং
- মেয়েদের জেনিটাল অর্গান পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে ।
- বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই কিডনীর ব্যাথা পাথরজনিত কারণে হয়ে থাকে ।
- এসব ক্ষেত্রে ব্যাথা তীব্র থেকে তীব্রতর এবং সঙ্গে রক্ত মিশ্রিত প্রস্রাবও হতে পারে । তীব্র জাতীয় জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হলে ব্যাথার সঙ্গে জ্বরও থাকতে পারে ।
উপরোক্ত উপসর্গগুলো ছাড়াও কিডনী রোগের কারণে ক্রমাগত :
- রক্ত-স্বল্পতা,
- ক্ষুধামন্দা,
- বমি বমি ভাব,
- বমি হওয়া,
- ক্রমান্বয়ে শারীরিক দূর্বলতা এবং
- চর্মজনিত কোন রোগ ছাড়া চুলকানি হতে পারে ।
- সমষ্ঠিগত এই কারণগুলো কিডনী অকেজো রোগের প্রধান প্রধান উপসর্গ তবে তা শুধুমাত্র ল্যাবরেটরি পরীক্ষার মাধ্যমে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় ।
- দুটো কিডনী সম্পূর্ণভাবে অকেজো হয়ে যাওয়ার পরই ডায়ালাইসিসের মাধ্যমে রোগীকে বাঁচিয়ে রাখা হয় ।
- আকষ্মিক কিডনী বিকল রোগে ডায়ালাইসিস অনেক রোগীকে সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দিতে পারে । একজন সুস্থ মানুষ তার নিকট আত্মীয়কে তার ১টি কিডনী দান করতে পারে।
- এতে কিডনী দাতার কোন ক্ষতি হয় না ।
আমি বাংলাদেশ সরকারের অডিট এন্ড একাউন্টস বিভাগের একজন কর্মচারি। প্রায় এক যুগের বেশি সময় ধরে কর্মরত থাকায় বিভিন্ন অভিজ্ঞতা শেয়ার করে থাকি। তারপরও যে কোন ভুল ত্রুটি হলে তা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কোন পরামর্শ থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। ধন্যবাদ।